NarayanganjToday

মাসুমা তারাননুম নোভা

তরুণ লেখক

নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় থানার অন্তর্গত মধ্য ধর্মগঞ্জ পাকাপুলে ১৯৯৬ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের উপর স্নাতক শেষ করে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মাস্টার্স করছেন। লেখালেখির মাধ্যমে অনেকদূর তিনি এগিয়ে যেতে চান সম্পূর্ণ নিজস্ব  ঢঙে।

প্রসঙ্গ করোনা : প্রকৃতি পুষিয়ে নিচ্ছে ক্ষতি!


সারা বিশ্ব যখন মানব সভ্যতার বিপ্লবের জোয়ারে ভাসছিলো, তখনই হঠাৎ মানব জাতির উপর নেমে এলো নতুন এক কালো ছায়া "করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯"।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০০ টিরও বেশি দেশে করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ১,১৩৯,২০৭ মানুষ এ ভয়ঙ্কর ভাইরাসে আক্রান্ত, এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৩৩,৮০৭ জন এবং মারা গিয়েছেন ৬০,৮৭৪ জন। (৪ এপ্রিল ২০২০ WHO এর তথ্য অনুযায়ী)

করোনা ভাইরাস শব্দটি লাতিন শব্দ করোনা থেকে নেয়া, যার অর্থ "মুকুট" বা "হার"। এ ভাইরাসের চারিদিকে একটি তৈল জাতীয় আবরণীর মধ্যে মুকুটের ন্যয় আকৃতি নেয়, তাই একে করোনা নামকরণ করা হয়। আপাতত দৃষ্টিতে সবচেয়ে শক্তিশালী ভাইরাস হিসেবে WHO একে নোভেল করোনাভাইরাস নাম ঘোষণা করেছে।

করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণীকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রানী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়।

সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাস ১৯৬০ এর দশকে আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগীর মধ্যে দেখা দেয় ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে।পরবর্তীতে সাধারণ হাঁচি-কাশি-সর্দিতে এর দেখা মিলে। মানুষের মধ্যে দুই ধরনের প্রজাতির ভাইরাস এর দেখা মিলে "মনুষ্য করোনা ভাইরাস ২২৯ই" এবং "মনুষ্য করোনা ভাইরাস ওসি৪৩" নামে। পরবর্তীতে  বিভিন্ন সময় এ ভাইরাস এর বেশ কিছু প্রজাতির দেখা মিলে উল্লেখযোগ্য ২০০৩ সালে "এসএআরএস সিওভি", ২০০৪ সালে " এইচসিওভি এনএল৬৩", ২০০৫ সালে "এইচকেইউ১", ২০১২ সালে " এমইআরএস-সিওভি" এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম চীনের উহান শহরে করোনা এর একটি প্রজাতির প্রাদুর্ভাব ঘটে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে "২০১৯-এনসিওভি" নামকরণ করে। উহানে পাওয়া এ ভাইরাসটি "এনসিআরএস-সিওভি" প্রজাতির সাথে ৭০% জীনগত মিল পাওয়া যায়, তাই ধারণা করা হচ্ছে এটি সাপ থেকে এসেছে যদিও এখানে বিশেষজ্ঞদের মতবাদের ভিন্নতা দেখা যায়। যদিও লোকমুখে প্রচলিত এবং কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে এটি বাদুর এর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে।

করোনা এর ভয়াবহ ছোবলে এশিয়াসহ পুরো বিশ্ব যখন কাতর তখন বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ এ ভাইরাসের এন্টিবায়োটিক তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছু কিছু টিম এর এন্টিবায়োটিক তৈরিতে সক্ষম বলেও দাবি করেছেন, একটি ভলেন্টিয়ার গ্রুপের চার সদস্যদের উপর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে,যদিও তার ফলাফল এপ্রিল মাসেই আসার কথা।

আপাতত এর কোনো প্রতিষেধক নেই তাই বর্তমানে ডাক্তাররা রোগের উপসর্গ ভেদে ঔষধ প্রয়োগ করছেন। কিছু কিছু ডাক্তারদের দাবি এলকোহল ড্রাগ জাতীয় ঔষধ করোনার বড় রকমের প্রতিষেধক আবার ভারতীয় ডাক্তাররা দাবি করছে ম্যলেরিয়ার ভ্যক্সিন এক্ষেত্রে কার্যকর!

সব কল্পনা জল্পনা ছাড়িয়ে এ রোগের সংক্রমন বিশ্বব্যপি তছনছ করে দিয়েছে। এ পর্যন্ত রেকর্ড ব্রেক মৃত্যু ইতালি, স্পেন, চায়না, যুক্তরাষ্ট্রে। বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৭০ উর্দ্ধ বয়স্করা এবং যাদের ডায়াবেটিস-কিডনি-হৃদরোগ-এজমা সহ নানা ধরনের সমস্যা আছে।

চায়নায় করোনা অবস্থা খানিকটা সিথিল থাকলেও ইতালির-স্পেন-যুক্তরাষ্ট্রসহ বর্তমানে এশিয়া মহাদেশেও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করছে।

মাত্র ২৭ দিন আগেই বাংলাদেশে নোভেল করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়, দিন দিন এর সংক্রমণ বেড়েই চলছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মানব সভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পরবে। আর বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের দেশের মানুষের অবস্থা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বেশ শঙ্কিত! বিশেষজ্ঞরা বলছে বাংলাদেশের কুড়ি লক্ষ লোক মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বোপরি, কেবল মানব সভ্যতাই নয় বিশ্ব অর্থনীতি এবং উন্নয়নের চরম ক্ষতিতে পরতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নোভেল করোনা ভাইরাস বদলে দিতে যাচ্ছে পৃথিবীর চিত্র! তবে কোথায় যেন শুনেছিলাম, সবকিছুই নেগেটিভ-পজেটিভ দুটো দিক থাকে, করোনাও হয়ত এর বাস্তব একটি উদাহরণ।

করোনার ভয়ে যখন প্রায় প্রত্যেকটি দেশই লকডাউন হয়ে গেছে, মানুষের বিচরণ কমেছে, ফ্যাক্টোরিগুলোতে তালা লেগেছে। এই সুযোগে প্রকৃতির মাঝে অমূল পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে, প্রকৃতি নিজেই পুষিয়ে নিচ্ছে তার ক্ষতিটা। ইতিমধ্যেই দীর্ঘ ত্রিশ বছর পর কক্সবাজারে ডলফিনের দেখা মিলল, সমুদ্র পাড়ে লাল কাঁকড়ারা ডিম পারতে শুরু করেছে। এছাড়াও প্রকৃতি স্তর ভারসাম্য ফিরে পেতে শুরু করেছে বিশ্বব্যপি। পরিবেশবিদরা একে ইতিবাচক ভাবেই নিচ্ছেন।

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। নারায়ণগঞ্জ টুডে-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য নারায়ণগঞ্জ টুডে কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

উপরে