NarayanganjToday

শিরোনাম

জালিয়াতি করে ৩ ফ্ল্যাট লিখে নেওয়ার অভিযোগ


জালিয়াতি করে ৩ ফ্ল্যাট লিখে নেওয়ার অভিযোগ

কথায় আছে সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। ফতুল্লার আফাজ নগরের স্বপনের স্ত্রী ও বন্দর ইউলসন রোডের আল আমিন প্রধানের মেয়ে আফরোজা আক্তারের অবস্থাও তেমন। দশ বছর পূর্বে কোরিয়া ফেরৎ সুদর্শন স্বপন পারিবারিক সিদ্ধান্তে আফরোজার সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হোন। সুখের সংসার। ভালোই চলছিল। তাদের সাত বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। সুন্দরী স্ত্রীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল স্বপনের। তার স্বাধীনতায় কখনও হস্তক্ষেপও করেনি। কিন্তু এই অন্ধবিশ্বাসের বুকেই ছুরি চালিয়েছেন স্ত্রী। এমন অভিযোগ খোদ স্বপন ও তার পরিবারের।

স্বপনের দাবি, প্রায় সময় তার স্ত্রী তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। কিন্ত লোকলজ্জার ভয়ে কখনই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেননি। এতে করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার সুদর্শন সেই স্বপনকে এখন আর কেউ মেলাতে পারেন না। তারপরও তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে সংসার ভাঙ্গার চিন্তা করেনি। কিন্তু চলতি বছরে গোড়ার দিকে স্ত্রীর পরকীয়া ও জালিয়াতির বিষয় সামনে আসাতে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় স্বপন।

তাদের দাবি, আফজানগরের সভাপতি আমজাদ হোসেনের সঙ্গে আফরোজার পরকীয়া। এরমধ্যে আফরোজার আরেক পরকীয়া প্রেমিক সাজু (ছদ্মনাম) বিষয়টি জেনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন। একপর্যায় তিনি স্বপন ও তার পরিবারকে আফরোজার নানা ধরণের তথ্য, তার সঙ্গে কথপোকথনের স্ক্রিনশট, ব্যক্তিগত ছবিসহ বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণও দেন। এ নিয়ে স্বপনের সংসারে অশান্তি শুরু হলে আমজাদ ও মোহসিনের পরামর্শে স্বপনের আফাজনগরের বাড়ি ছেড়ে বন্দরে চলে যান আফরোজা।

স্বপনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আমাজাদের স্ত্রী হট্টগোল ও আগের পরকীয়া প্রেমিক সাজুর তথ্য ফাঁসের ঘটনায় লোকলজ্জার ভয়ে আফরোজা বন্দর চলে যায়। পরবর্তীতে স্বপনের পরিবার বিষয়টি পারিবারিকভাবে মিটমাট করার উদ্দেশ্যে চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি আফরোজা ও তার মাকে নিয়ে আফাজ নগরে দরবারে বসেন। কিন্তু পরকীয়া প্রেমিক আমজাদের প্ররোচনায় কোনোভাবেই সমাধানের পথে আসতে রাজি হয়নি আফরোজা। পরবর্তীতে ৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬নং আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন আফরোজা। এতে আসামি করা হয়, নিজ স্বামী নাহিদ হোসেন স্বপন, ননদের স্বামী নুর হোসেন, ভাশুর মোফাজ্জল এবং শ্বশুর নজরুল ইসলাম বেপারিকে।

স্বপনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আফরোজার সঙ্গে আমাজাদ হোসেনের পরকীয়া তার স্ত্রী জেনে যাওয়ায় তার সংসারেও আশান্তি নেমে আসে। মূলত তিনি নিজে আশান্তিতে থাকায় বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে আফরোজাকে বন্দরে চলে যেতে উৎসাহিত করেন। একইভাবে এই আমজাদে প্ররোচনাতেই আফরোজা মিথ্যা তথ্য সম্বলিত অভিযোগ উত্থাপন করে স্বামী, শ্বশুর ও ভাসুরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শুধু তাই নয়, আমাজাদের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় ৪৮৩৫ নম্বরের একটি দলিলমূলে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে স্বপনের তিনটি ফ্ল্যাট নিজনামে নামজারি করিয়ে নেন আফরোজা। অথচ এই নম্বরের দলিরের সঙ্গে আফরোজার দেখানো ফ্ল্যাটের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

এদিকে স্বপনের পরিবার এই প্রতিবেদকের কাছে, আমজাদের সঙ্গে আফরোজার এবং মোহসিনের কথপোকথনের বেশ কটি কল রেকর্ড দেন। যা পর্যালোচনা করে পর্দার আড়ালের খেলারাম হিসেবে যে আমজাদ হোসেন ও মোহসিন খেলে যাচ্ছেন তা কিছুটা স্পষ্ট হওয়া গেছে। এছাড়াও আগের পরকীয়া প্রেমিক সাজুর (ছদ্মনাম) দেওয়া তথ্য প্রমাণগুলোও এই প্রতিবেদকের কাছে প্রমাণ স্বরূপ দেওয়া হয়।

স্বপনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে ফ্ল্যাটের নামজারি করার ঘটনায় আদালতে বাদী হয়ে মামলা করেছেন স্বপন। এতে আফরোজা, তার মা নাসিমা, পরকীয়া প্রেমিক আমজাদ ও মোহসিনকে আসামি করা হয়। এর আগে চলতি বছরের ৭ মার্চ আফরোজার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হুমকি ধামকির অভিযোগ তুলে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন স্বপন। পরবর্তীতে ১৩ মার্চ আইনগতভাবে বিবাহ বিচ্ছেদও করেন। যা আইনগতভাবে ১৩ জুন কার্যকর হবে।

অসুস্থ স্বপন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা বিষয়টি আইনীভাবে সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি। যথাযথ সহযোগিতা পাইনি। বর্তমানে আফরোজা ও তার পরকীয়া প্রেমিক আমজাদ ও মোহসিনের হীন চক্রান্তে আমাদের পুরো পরিবার বিপর্যস্ত। এর থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।

এ বিষয়ে জানতে আফরোজা আক্তারের মুঠোফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে তিনি এখনও অনেক সম্মান করেন। তাই তিনি কাদাছোড়াছুড়ি করতে আগ্রহী নন। শ্বশুরবাড়ির কেউ কেউ তার স্বামীর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে লাভবান হতেই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

আফরোজা বলেন, আমি মানুষ। ভুলের ঊর্ধ্বে আমি নই। যদি আমার ভুল কিছু থেকে থাকতো তাহলে সেটি সামাজিকভাবে, ঘরোয়াভাবে সমাধান করতো। কিন্তু তারা সেটা না করে আমাকে নির্যাতন করেছে। আমার ফোন কেড়ে নিয়েছে। যা শোভনীয় ছিল না। সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধান করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে আমি মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমি কোনো জালিয়াতি করিনি। আমার স্বামী নিজেই আমার নামে তার ফ্ল্যাট সাবরেচিস্ট্রি করে দিয়েছে। যার অরিজিনাল দলিল আমার কাছে রয়েছে। মিউটিশন করানোর সময় দলিল নম্বরটা ভুল উঠেছে। এছাড়া আর কিছু নয়।

উপরে