নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর বহিস্কার চেয়েছেন একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া। সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুগত ও নৌকা প্রতীকের ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন টিটু, এমন অভিযোগ তুলে ওই দাবি জানান বারী ভূঁইয়া। এসময় একই অভিযোগে থানা বিএনপির সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহরও বহিস্কার চান তিনি। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে ফতুল্লার আজমেরীবাগ এলাকায় অবস্থিত ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
এসময় তার সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. সুলতান মাহমুদ মোল্লা, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার মো. আক্তার হোসেন, ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশ, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা সীমান্ত প্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া বলেন, বিগত আওয়ামীলীগের শাসনামলে ১৭ বছরে গডফাদার শামীম ওসমানের সৈনিক হিসেবে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মনিরুল আলম সেন্টু। নারায়ণগঞ্জে খুনি হাসিনার অন্যতম দোসর গডফাদার শামীম ওসমানের সঙ্গে আঁতাত করে চলা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গডফাদার শামীম ওসমানের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে, তার পক্ষে ভোটপ্রার্থনা করে বক্তব্য রাখার অভিযোগে মনিরুল আলম সেন্টুকে বাংলাদেশ জাতীতাবাদী দল বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং সদস্য পদগ্রহণ করেন যা খোদ মনিরুল আলম সেন্টু এক বক্তব্যে তা স্বীকারও করেন (ভিডিও বক্তব্য অনলাইনে সংগৃহিত)। এছাড়াও মনিরুল আলম সেন্টু আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও করেন। এবং এই নির্বাচনে সেন্টু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার লক্ষ্যে গডফাদার শামীম ওসমানের নির্দেশনায় তারই সেকেন্ড ইন কমান্ড সন্ত্রাসী শাহ্ নিজামের নম পার্কে অন্যান্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ধরে নিয়ে, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নির্বাচন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়। এর উৎকৃষ্ট সাক্ষী হচ্ছেন সেসময়কার চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা হয়েছিলেন তারা।
সেন্টু নিজের মুখেই বলেছেন যে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন৷ ১৭ বছর শামীম ওসমান ও তার অনুগত সন্ত্রাসী শাহ নিজামের সাথে আঁতাত করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে৷ সেন্টু ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ২৫ জুলাই ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভায় ছাত্রজনতাকে সন্ত্রাসী, নৈরাজ্যকারী ও দূর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে তাদেরকে প্রতিরোধেরও ঘোষণা দেয়। শামীম ওসমানকে পীর আখ্যা দেয়া সেন্টু বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের অনেক মিছিল-সমাবেশেও অংশ নিয়েছে। অথচ এই সেন্টুকে বিএনপিতে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছেন থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু ও সহসভাপতি হাজী শহীদুল্লাহ। তারা পৃথক অনুষ্ঠানে সেন্টুর পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। যারা সেন্টুসহ আওয়ামীলীগের দোসরদের বিএনপিতে পুর্নবাসিত করার চেষ্টা করবে, তাদেরকে যেন দল থেকে বহিস্কার করা হয়। সেন্টুর মতো আওয়ামীলীগের দোসরদের আমরা বিএনপিতে মেনে নিতে পারিনা। যারা তাদেরকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করবে তাদেরকেও আমরা প্রতিহত করবো।
দলে ফিরতে সেন্টুর আবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরাও পুরো বিষয়টি দলের হাইকমান্ডে জানিয়েছি৷ সেন্টুর বিষয়ে সকল তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে৷ সম্প্রতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও হাজী শহীদুল্লা কুতুবপুরে একটি অনুষ্ঠানে পৃথক বক্তব্যের মাধ্যমে সেন্টুকে বিএনপিতে পুনর্বাসিত করার প্রেক্ষাপট তৈরি করার ঘৃণ চেষ্টা করেছেন যা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল। যেখানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান নিজেই বলে দিয়েছেন, দলত্যাগ করা এবং বহিষ্কৃত কোনো ব্যক্তি ও অন্য কোনো দল থেকে কাউকে দলে ভেড়ানো সম্পূর্ন নিষেধ সেখানে তারা তার নির্দেশ অমান্য করে অমন বক্তব্য দেওয়ার ধৃষ্টতা কী করে দেখাতে পারে? আমরা মনে করে গডফাদার শামীম ওসমানের প্রেসক্রিপশনে তারা সেদিন বক্তব্য রেখেছেন। এবং শামীম ওসমানের পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করার লক্ষ্যে শহিদুল ইসলাম টিটু ও হাজী শহীদুল্লাহ নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাদেরকে আওয়ামী লীগ মার্কা বিএনপি বলেই মনে করছি। একই সঙ্গে তারা যে আওয়ামী লীগের দোসর এবং আওয়ামী লীগের লোকজনকে বিএনপিতে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আমরা শহিদুল ইসলাম টিটু ও হাজী শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভবে ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :