NarayanganjToday

শিরোনাম

স্বামী-স্ত্রী’রও রেহায় নেই : পুলিশ চেকপোষ্টে প্যান্ট খুলতেও এখন বাধ্য করা হয়!


স্বামী-স্ত্রী’রও রেহায় নেই : পুলিশ চেকপোষ্টে প্যান্ট খুলতেও এখন বাধ্য করা হয়!

পুলিশ চেকপোষ্টের নামে হাজিগঞ্জ মোড়ে আর কতো হয়রানির শিকার হবে সাধারণ মানুষ? এমন প্রশ্ন এর আগে বহুবার উচ্চারিত হলেও এর কোনো সদুত্তর মিলেনি। পাওয়া যায়নি কোনো প্রতিকার। এখানে একজন এএসআই-এর নেতৃত্বে থাকা দু’জন কনস্টেবল প্রতি মুহূর্তেই সাধারণ মানুষকে নানা হয়রানি করে চলেছে। 

ইতোর্পূর্বে পুলিশ চেকপোষ্টের নামে নিদারুণ হয়রানির কথা অসংখ্যবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও বদলাচ্ছে না চেকপোষ্টে থাকা পুলিশের চরিত্র। তাঁদের আচরণ অনেকটাই ধান্ধাবাজ ছ্যাচড়াদের মতো। এমন অভিমত সাধারণ পথচারি থেকে শুরু করে এই পথে চলাচলরত যাত্রীদের।

বিভিন্ন সময়ের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, একসাথে কোনো ছেলে মেয়ে চেকপোষ্ট ক্রস করতে গেলেই তাঁদের হতে হয় সীমাহীন হয়রানির শিকার। যদি স্বামী স্ত্রীও হয় তাতেও রেহায় মিলে না। চাওয়া হয় কাবিননামাও। এমনই এক অভিযোগ তুলে সাবেক মহিলা কাউন্সিলর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি ওপেন ডে হাউজে বক্তব্যও রেখেছিলেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘তাঁর সদ্য বিবাহিত মেয়ে স্বামীকে নিয়ে জালকুড়ি চেকপোষ্টের সামনে দিয়ে আসার সময় পুলিশ তাঁদের আটকে দেন। এসময় তাঁদের দুজনকে দুদিক নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করে। তাঁরা স্বামী স্ত্রী পরিচয় দেয়ার পরও রেহায় মিলেনি। চাওয়া হয়েছিলো কাবিননামা। পরে মেয়ে কান্না করে তাঁর মাকে ফোন দিলে তিনি দৌড়ে আসেন চেকপোষ্টে।’

শুধু এ ঘটনাই নয়, চেকপোষ্টে মানুষজনকে থামিয়ে মানিব্যাগের প্রতিটি রন্ধে রন্ধে খুঁটিয়ে খুঁটিয়েও চেক করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ শোনা যায়, কারো কাছ থেকে চাহিদা মতো কিছু না পেলে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয় এসব চেকপোষ্ট থেকে।

এদিকে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বুধবার (১ আগষ্ট) দুপুরে সদর থানার অন্তর্ভূক্ত হাজিগঞ্জ চেকপোষ্টের কাছে। এখানে ডিউটি করছিলেন এএসআই এনায়েত। তাঁর সাথে ছিলেন কনস্টেবল কামরুল ও রোকন। তাঁদের মধ্যে কামরুল এসে একটি সিএনজি আটকে এক যাত্রীকে নামতে বললনে। যাত্রী নামতে নামতে জানতে চাইলেন. ‘কি ভাই চেক করবেন?’ এমন প্রশ্ন করতেই তেলেবেগুনে জ¦লে ওঠেন কনস্টেবল কামরুল।

তিনি যাত্রীকে হুকুম করেন ‘পকেটে টাকা পয়সা মোবাইল যা আছে বের করেন।’ যাত্রী দুই হাত শূন্যে উঠিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বের করতে হবে না, আপনি চেক করতে পারেন’। তাতেও কাজ হচ্ছিলো না। পকেটে থাকা মানিব্যাগ, প্যাড, মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বের করতো হলো। এ সময় ওই যাত্রী বলেন, ‘ভাই যে আচরণ করছেন, প্যান্টও কি খুলতে হবে? তখন কনস্টেবল বলেন, ‘খুলেন।’ এমন সময় যাত্রী অসহায় ভঙ্গিতে তাঁর প্যান্টের একটি বোতাম খুলে দিয়ে বলেন ‘চেক করেন ভাই।’

প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই যাত্রী যখন তাঁর একটি মোবাইল নিয়ে সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) কামরুল ইসলামকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করতে যাচ্ছিলেন তখনই কনস্টেবল কামরুল ফোনটি কেড়ে নিয়ে দাম্ভিকতার সাথে বলেন, ‘কামরুল একজন ওসি, ছোট, আপনি তাঁর বড় যে আছে এসপি, তাঁর লগে যাাইয়া কথা বলেন’।

ভুক্তভোগি ওই ব্যক্তি বলেন, “পুলিশ হলেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের সাথে তাঁদের আচরণ থাকবে শোভন। কাউকে সন্দেহ হলে ডিউটিরত অবস্থায় একজন পুলিশ চেক করতেই পারে। কিন্তু এর আগে অন্তত নিয়ম অনুসারে একজন পুলিশ ওই ব্যক্তিকে ভদ্রতা দেখিয়ে সালাম দিয়ে অনুমতি চাইবেন চেক করার। কিন্তু কনস্টেবল কামরুল তার কোনো ধারই ধারেনি। যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “হয়তো লোকজন জড়ো না হলে মাদক দিয়ে আজ আমাকে ফাঁসিয়েও দিতেন। এরা এতটা সাহস পায় কি করে? এদের লাগাম টেনে ধরবে কে? নাকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই এদেরকে রাস্তায় নামিয়ে দেয় এভাবে মানুষকে হয়রানি করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে?”

১ আগষ্ট, ২০১৮/এসপি/এনটি

উপরে