নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এএসআই (বরখাস্তকৃত) সালাউদ্দিনের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিদক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে সালাউদ্দিন ও তাঁর সহযোগি মো. রনিকে আদালতে হাজির করেন। আদালত শুনানি শেষে তাঁদের ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ১৯ আগস্ট দিবাগত রাত ৪ টার দিকে র্যাব-১১’র একটি দল সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট থেকে সালাউদ্দিনকে তাঁর চালক মো. রনিসহ আটক করে। এসময় তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা, নগদ ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা ও ২৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং ১টি ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ১টি পুলিশের আইডি কার্ড ও ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় র্যাব-১১ এর কর্মকর্তা মোতালেব ডালি বাদী হয়ে আটক সালাউদ্দিন ও তাঁর সহযোগি গাড়ি চালক মো. রনির বিরুদ্ধে মাদ্রকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করেন।
সোমাবার (২০ আগস্ট) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক (ভারপ্রাপ্ত সিও) মেজর আশিক বিল্লাহ সালাউদ্দিনের আটক সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন।
র্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আশিক বিল্লাহ জানান, গত ২৩ জুলাই র্যাব-১১ এর একটি দল নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বরখাস্তকৃত এএসআই সালাউদ্দিনের সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বাসায় তল্লাশী চালিয়ে ৫ হাজার ৬শ’ পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ৯ লাখ ৪শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ ও সদর থানায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ দু’টি মামলায় সে পলাতক আসামী ছিল।
ভারপ্রাপ্ত সিও আরও জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে গ্রেফতারকৃত এএসআই (বরখাস্তকৃত) সালাউদ্দিন স্বীকার করে যে, নারায়ণগঞ্জ ডিবিতে থাকা অবস্থায় তাঁর সঙ্গে টেকনাফের কিছু মাদক ব্যবসায়ীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর থেকে টেকনাফ থেকে নিষিদ্ধ ইয়াবা ট্যাবলেট আমদানি করে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ ও বিক্রি করে আসছিল।
এছাড়াও এএসআই সালাউদ্দিন র্যাবকে আরো জানায়, বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে সে বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিত এবং সেই বাসা ব্যবহার করে তার চালক ও অন্যান্য সহযোগিদের মাধ্যমে ইয়াবা মজুদ করে বিক্রিয় করত। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৭ মাস পূর্বে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এএসআই থাকাকালীন সে বরখাস্ত হয়। এরপর থেকেই সে পলাতক ছিলো।
এরমধ্যে ২৩ জুলাই রাতে সালাউদ্দিনের শহরের নগর খানপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জের ফ্রেন্ডস টাওয়ারের বাসায় পৃথক অভিযান চালিয়ে থেকে ৫ হাজার ৬‘শ ২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব-১১। একইদিন মাদক বিক্রির ৯ লাখ ৪‘শ টাকাসহ সুমন (২৫) নামে সালাউদ্দিনের এক সহযোগিকেও আটক করা হয়েছিলো।
ওই সময় র্যাব-১ এর সিনিয়র এএসপি জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানিয়েছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের পর তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে সালাউদ্দিনকে পাইকারি বিক্রেতা হিসেবে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছিলো সালাউদ্দিন নিজের প্রাইভেট কার দিয়ে বিভিন্ন জনের চাহিদা মতে ইয়াবা সাপ্লাই দিতেন। এর সূত্র ধরেই সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্রেন্ডস টাওয়ারে সালাউদ্দিনের বাসায় নজরদারি করা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে অভিযান চালালে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সে এবং তাঁর ড্রাইভার জসিম পালিয়ে যায়। পরে সেখানে তল্লাশী চালিয়ে ৫ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ৮ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও একইদিন রাত ৯টায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার নগরখানপুর এলাকায় সালাউদ্দিনের অপর ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে ৪‘শ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, উদ্ধারকৃত ইয়াবা ও টাকার মালিক সালাউদ্দিন পুলিশের একজন বরখাস্তকৃত এএসআই। মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রায় ৭ মাস পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা থেকে সে বরখাস্ত হয়। সেই থেকে সালাউদ্দিন পলাতক। তবে পলাতক হলেও সে এখনো নারায়ণগঞ্জ ডিবির অফিসার পরিচয় দিয়ে চলে। স্থানীয় লোকজন তাকে ‘সালাউদ্দিন স্যার’ ও ডিবির স্যার হিসেবে চিনে।
২০ আগস্ট, ২০১৮/এসপি/এনটি
আপনার মতামত লিখুন :