বিষয়:
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০১৮, ০৪:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০১৮, ০২:৪০ পিএম
নারায়ণগঞ্জ টুডে
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০১৮, ০২:৪০ পিএম
নারায়ণগঞ্জ টুডে
সপ্তাহ না ঘুরতেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছেন নারায়ণগঞ্জের নবাগত পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান। খানপুর বরফকল এলাকার চৌরঙ্গি পার্কের কাছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাথে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ইমেজ পুনরুদ্ধার এখন তাঁর জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠেছে।
এদিকে পুলিশ সুপার নিজ দায়িত্ব ঠিক মতো বুঝে নিতে না নিতেই এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি পুলিশ সুপারকেই বিতর্কিত করার কৌশল কিনা, সে প্রশ্নও এখন অনেকের মাঝে ঘুরে ফিরে আসছে। আর যদি তা না হবে তাহলে, বরফকলের ওই ঘটনাটি যেখানে অল্পতেই সামাল দেয়া যেতো সেখানে তা ধুন্ধমার ঘটনায় টেনে নেয়ার নেপথ্য কারণ কি হতে পারে, এ বিষয়টির দিকেও পুলিশ সুপারের আলোকপাত করা জরুরী বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
অপরদিকে ওই ঘটনার পর পুলিশ সুপারের তাৎক্ষিণক নেয়া কিছু উদ্যোগ সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এরমধ্যে সৃষ্ট ঘটনার মূল খুঁজে বের করার জন্য একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন, আহতদের নিরাপত্তার জন্য ৩‘শ শয্যা হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন উল্লেখযোগ্য।
এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার পূর্বে একদল ডিবি পুলিশ চৌরঙ্গি পার্ক এলাকায় অবস্থান করছিলেন এবং তাঁরা পার্ক কর্তৃপক্ষ সাত্তারের সাথেও দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছিলেন। তাই প্রশ্ন ওঠেছে সৃষ্ট ওই ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত কিনা? যদি তা হয়েই থাকে তাহলে, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার। জানা দরকার, সেখানে সংঘর্ষ ঘটার পূর্বে একদল ডিবি পুলিশ কেন গিয়েছিলেন এবং এর নেপথ্য কারণ কি? আর এই ঘটনার অদ্যপান্ত খুঁজে বের করাই এখন পুলিশ সুপারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনময় সভায় বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেছিলেন, ‘অপরাধি যদি পুলিশও হয় তাহলে তাঁকেও ছাড় দেয়া হবে না’। তাই দেখার বিষয় এখন শেষতক তিনি তাঁর বলা কথার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে পারেন কিনা?
তবে, বরফকল এলাকার সৃষ্ট ঘটনায় পুলিশ কিংবা ব্যবসায়ী অথবা এ ঘটনার নেপথ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষের সম্পৃক্ততা ছিলো কিনা তা যদি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাহলে, নগরবাসীর কাছে যারপরনাই প্রশংসিতই হবেন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। ফলে এখন দেখার বিষয়, তিনি সৃষ্ট এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানে কতটা সফল হতে পারেন।
২৬ আগস্ট রোববার সন্ধ্যায় শহরের বরফকল এলাকার চৌরঙ্গি পার্ক সংলগ্ন ‘মাই লাইফ’ ফাস্ট ফুডের দোকানে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের মারধরের জালাল উদ্দিন, স্ত্রী রীনা ইয়াসমিন ও তাদের দুই ছেলে রবিন এবং আলামিন আহত হলে পরবর্তীতে জনতার হামলায় গুরুতর আহত হন নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই মিজান ও সায়েমসহ আরো কয়েকজন।
তাঁদের মধ্যে এসআই মিজান ও সায়েমকে প্রথমে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে এবং পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও আহত জালাল উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী রীনা ইয়াসমিনসহ দুই ছেলে রবিন এবং আলামিনকে প্রথমে ৩‘শ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের মধ্যে রীনাকে ছাড়া বাকি তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
সৃষ্ট এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নূরে আলমকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম এবং ডিআই-১ সরাফতউল্লাহ। কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমিনুল বাদি হয়ে রোববার রাতেই সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে ‘মাই লাইফ’ ফাস্টফুডের মালিক জালাল উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী রীনা ইয়াসমীন এবং ছেলে রবীনসহ আরও অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
২৭ আগস্ট, ২০১৮/এসপি/এনটি
আপনার মতামত লিখুন :