NarayanganjToday

শিরোনাম

টোটাল ফ্যাশনে নিয়মে ছাটাই তবুও ভাঙচুর, আন্দোলন কার স্বার্থে


টোটাল ফ্যাশনে নিয়মে ছাটাই তবুও ভাঙচুর, আন্দোলন কার স্বার্থে

শ্রম আইন মেনে ১২ শ্রমিককে ছাটাই করার পরও বন্দরের টোটাল ফ্যাশনে ভাঙচুর চালানোর পর এবার সেই শ্রমিকদের কাজে পুনঃবহাল, ১৭ দফা দাবিতে নগরে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকেরা। অভিযোগ উঠেছে, এতে কথিত শ্রমিক নেতারা ইন্ধন দিচ্ছে।

এদিকে আইন মেনে শ্রমিক ছাটাইয়ের পর এমন আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন খোদ শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকেও। অন্যদিকে মালিক পক্ষ এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তৈরি পোশাক খাতে করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে বিশেষ সুবিধা আদায়ে কিছু স্বার্থবাদীদের হটকারী সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের আরও হতাশ করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, শ্রম আইন অনুযায়ী টোটাল ফ্যাশনের ১২ শ্রমিককে চার মাসের অগ্রিম বেতনসহ যাবতীয় পাওয়ানাদি পরিশোধ করে চাকুরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। ২০ মে সকালে কারখানার দুটি ফটক দিয়ে অন্য শ্রমিকের সঙ্গে ওই ১২ জন কারখানায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা নিরাপত্তাকর্মীরা পিটিয়ে নারী শ্রমিকের দাঁত ভেঙেছে, এমন গুজব ছড়িয়ে লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। শ্রমিকরা কারখানার কম্পিউটারসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। হামলায় কারখানার ব্যবস্থাপক কবিরুল আহম্মেদ, পিএম নুসরাত, জিএম জাহেদসহ অন্তত ১০ আহত কর্মকর্তা আহত হন। এতে কারখানাটির উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে মালিক পক্ষ।

ওই ঘটনায় বন্দর থানায় এক থেকে দেড় শত অজ্ঞাত শ্রমিকদের আসামী করে মামলা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ দিকে শনিবার (২২ মে) নগরীতে টোটাল ফ্যাশনের কয়েকজন শ্রমিকসহ কিছু বহিরাগতদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতারা।

জেলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি সেলিম আহম্মেদ বলেন, ঈদের আগে শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কথা বলায় ১২ শ্রমিককে আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করে ছাটাই করা হয়েছে। ঈদের পর ছুটি শেষে কারখানায় প্রবেশ পথে শরীরের তাপমাত্রা মেপে কারখানায় প্রবেশে বাধা দিলে বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে সিকিউরিটি কোম্পানীর নিরাপত্তা কর্মীদের হামলার শিকার শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এতে কারখানা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। মানববন্ধন থেকে বন্ধ কারখানা চালু, মামলা প্রত্যাহার ও ১২ শ্রমিককে পুনরায় বহালের দাবি জানানো হয়েছে।

টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলছেন, শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করে মালিকের ছাটাই করার অধিকার রয়েছে। শ্রম আইনে কোনো বাধা নিষেধ নেই। টোটাল ফ্যাশন যেহেতু শ্রমিকদের আইনানুযায়ী পাওয়ানা পরিশোধ করেছে, তাহলে এ আন্দোলন করাটা অযৌক্তিক।

টোটাল ফ্যাশনের মালিক হাসিব আহম্মেদ জানান, ‘বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসের এই সময়ে যখন সারাদেশে গার্মেন্টস শিল্প টিকিয়ে রাখাটাই কষ্টের। তখন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কারখানা চালু রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম। ঈদের সময় বেতন-বোনাসসহ পাওনা পরিশোধ করেই ১২ জন শ্রমিককে ছাটাই করা হয়। ঈদ পরবর্তী সময়ে সেই শ্রমিকরাই উস্কে দিয়েছেন বাকিদের। কেউ যদি ১০ টাকা পেত, কষ্ট হলেও আমি ৫০ টাকা দিতে রাজি আছি। এ ভাবে বিনা কারণে ভাঙচুর করলো কেন? কেন উৎপাদন বন্ধ করে দিলো। কেন কর্মকর্তাদের রক্তাক্ত করা হলো?’

নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সাখাওয়াত হোসেন জানান, কারখানাটিতে ভাঙচুর ও আহতের ঘটনায় বন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে। সেটা তদন্তাধীন। তাছাড়া কলকারখানা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ যে যার স্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে। বিকেএমইএ’র সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান শ্রমিক, মালিক, কলকারখানা অধিদপ্তর ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশসহ সকল পক্ষকে নিয়ে সোমবার (২৪ মে) বসবেন। আশা করছি, সেখানেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

উপরে