রাজশাহী কলেজের এক ছাত্র দুই বন্ধুকে নিয়ে রোজার রাতে তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে পুঠিয়া উপজেলার হারুগাতি গ্রামে।
গ্রামবাসী ওই প্রেমিককে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, খবর পেয়ে পুলিশ ওই ছাত্রকে উদ্ধার করতে গেলে এলাকাবাসী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশকেও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে সকালে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কয়েকজন গ্রামবাসী এবং রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়ার হায়দার আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই উপজেলার হারুগাতি গ্রামের অধিবাসী ও সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর।
রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দুই বন্ধু নাদিম মোস্তফা ও রবিন হোসেনকে নিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে হারুগাতি গ্রামে যান হায়দার। দুই বন্ধুকে পাশের বাজারে অপেক্ষা করতে বলে হায়দার তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যান। ঘটনা টের পেয়ে স্থানীয়রা হায়দার ও তাঁর দুই বন্ধুকে আটক করে পিটুনি দেয়। তারা হায়দারের এক পায়ে লোহার রডও ঢুকিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে পুঠিয়া থানা পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে যায়। তারা অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিতে যেতে চাইলে গ্রামবাসী বাধা দেয়। তারা পুলিশকে জানায়, সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বিচার হবে।
এ নিয়ে গ্রামবাসী ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা হয়। এর একপর্যায়ে মসজিদের মাইক থেকে কে বা কারা পুলিশকে প্রতিহত করতে গ্রামবাসীর প্রতি আহ্বান জানালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় উত্তেজিত গ্রামের লোকজন পুলিশ ভ্যানের চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়ে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। গ্রামবাসী নারী পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিতও করে। এ সময় পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ লাঠিপেটা করে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে ভোরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে এক এক করে অভিযুক্তদের থানায় নিয়ে যায়।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান জানান, আহত হায়দারকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হায়দারের প্রেমিকা পুলিশকে জানিয়েছে, দেখা করতে এসে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হায়দার তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা ধর্ষণের অভিযোগে পুঠিয়া থানায় হায়দারকে প্রধান আসামি এবং তাঁর দুই বন্ধুকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। হায়দার ও তাঁর দুই বন্ধুকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, ঘটনার সময় পুলিশের ওপর হামলার কারণে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুঠিয়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আরো একটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হবে।
২৮মে,২০১৯/এমএ/এনটি
আপনার মতামত লিখুন :