NarayanganjToday

শিরোনাম

অনুভব আহমেদ এর একগুচ্ছ কবিতা

অনুভব আহমেদ


অনুভব আহমেদ এর একগুচ্ছ কবিতা

ঘুঁটি


একদিন খুব ঝিঁঝিঁদের ডাক শুনে আমরা যে পথ ভুল করেছিলাম বাঁক বদলের মুখে সেখানে তল খুঁজে পায়না শিশুদের ঘুম।
হরফে লুকানো নির্জনতায় প্রলাপগুলো ক্ষণমাত্র!
আমাদের গাঢ় অভিসন্ধিগুলো গাছের পাশে উদ্ধত কুঠার
নিজেদের চোখে চোখ রাখা তীব্র বিষাদে
পথিকবর তুমি কোথায় চলে যাও?


তোমার চোখের বিষাদ আমি খুঁজেছি সমস্ত। জ্ঞাত অভিলাষে আর অভিলাপে তুমি চূড়ান্ত।
ইঙ্গিতের দিকে ডেকে অন্তিমের ছল। এভাবেও হয়!
প্রিয়, আমার সাবধানী নৌকা, আমিও শিখে গেছি ছল। মৃৎফুলের গলনাংকে এইবার তুমি চেলে দাও অগুনতি ঢেউ।

 

প্রস্তাব

মাঝি হবা? নৌকা ভেরাবো ঘাটে।
জলের উল্লাসে মাতবো থইথই
ভাসাবে নাও?
কথা দিচ্ছি ক্লান্ত হলে ছায়া হবো
হবো পাটাতনের বুকে দেহ পাতবার আয়েশ পারাপার শেষে ঘাটে ফিরলে পানখিলিটার ভাঁজ হবো
চুল ভিজিয়ে মুছিয়ে দেবো গা
ভাগের সবটুকু  বেশী তুলে পাতে তুলে দিয়ে
একলা হবো তোমার সাথে
মাঝি হবা?
আমার এ শ্যাওলা ধরা নায়ে, বাড়ছে জনম
ভরছে  জল মাঝির অপেক্ষাতে।

 

পৃথিবী এবং তুমি

সেদিন বলছিলে -তুমি কেবল আমাকে নিয়েই লিখছ
পৃথিবীটাকে নিয়েও লিখতে পারতে, লিখতে পারতে জানা অজানাকে নিয়ে।
আমি স্মিত হেসেছিলাম
বলা হয়নি -  তোমাকে আবিষ্কার কোরেছি আমি পৃথিবী আবিষ্কারেরও বহুপূর্বে।
তখনো তোমার সংগে আমার দ্যাখা হয়নি
ফলন ভালো হয়নি বলে কিষাণীর পায়ের কাছে  পরে থাকা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ দুপুরটার যে বর্ণনা লিখেছিলাম এই এতোদিন পর তা হুবহু মিলে গেছে তোমার সংগে!
তোমার  জেগে উঠা শরীর ছেনে আমি বুঝেছি মানুুষের মৌলিক চাহিদা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, হাহাকার
তোমার পোড়া ক্ষত আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে
বেশ্যা রাজনীতিবিদ আর নুয়ে পড়া বহুগামী রাষ্ট্রের অবক্ষয়।
আমি তোমার মধ্যেই দেখেছি ঈশ্বর
এবং তোমার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটতে দেখেছি অন্ধকার
একই  দূরত্বে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তোমার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখেছি মানবিকতা এবং অমানবিকতাকে।
আমি তোমার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছি সুখ
আমি তোমার মধ্যে কাঁদতে দেখেছি দুঃখ
আমি তোমার আঙুলের ছাপে খুঁজে পেয়েছি পাপ
চোখের তারায়  আশ্চর্য পবিত্রতা!
আমি আরও পেয়েছি
তোমার ঠোঁটের তুুরুপে পৃথিবীর তাবৎ ভুল এবং শুদ্ধতা
রাষ্ট্র, দ্রোহ, বিপ্লব, স্লোগান, মিছিল, প্রেম, ভালোবাসা, প্রত্যাখান, ঘৃণা, শরীর!
সবই তুমি!
তোমাকে ছুঁয়েই  প্রতিটি শব্দ কবিতা
আর প্রতিটি কবিতাই পৃথিবী, জানা এবং অজানা।
তুমি না হলে শব্দরা নত মুখে আমার কাছ থেকে দূর বহুদূর।
তবে কেনো আমি তোমাকে নিয়ে লিখবোনা?
এবং
একদিন তোমাকে লিখতে লিখতেই আমি লিখে ফেলবো সমস্ত পৃথিবী,জানা অজানা!


ঘূর্ণি

রাতের মসৃণ শরীরে পাথরের মতো চেপে থাকা স্তব্ধতা
আমাকে টুকরো টুকরো করে উল্লাস করে
দিন হলেই পুরনো অস্বস্তির ক্ষুরধার নখ আঁচড়ে আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন করতে থাকে মনোযোগ।
এসব একই নিয়মে রোজ ঘুরেফিরে আসে।
তোমাকে মিথ্যে জানার পর
আমার মাথার পাশে সারাদিন কাঁদে একটা মাধবীলতা গাছ
তোমাকে মিথ্যে জানার পর
আমার হৃদপিন্ড হয়ে উঠেছে একটা আদর্শ প্যারাসাইট
আর তুমি?
প্রচন্ড ভালোবেসে, সব থেকে টেনে নিয়ে
ছুঁড়ে দিয়েছো এইসব ঘূর্ণির ভেতর।

উপরে