NarayanganjToday

শিরোনাম

ধাঁধাঁ (তিন)

শাপালা জাকিয়া


ধাঁধাঁ (তিন)

হঠাৎ ভয়ের পরিবর্তে আমার খুব ক্লান্ত লাগতে শুরু করলো। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে, খোলা রাখা যাচ্ছে না। অথচ এমন পরিস্থিতিতে ঘুমিয়ে পড়াটা যে ঠিক না, সেটাও অনুভব করছি। যদি ঘুমের মধ্যে অশরীরি কোন কিছু আমাকে আক্রমণ করে, যে নিলয়টা অদৃশ্য হয়ে গেলো, সে যদি ফিরে আসে!
বুকের মধ্যে প্রবল অস্থিরতা, নিলয়কে এতো ডাকলাম, কিন্তু ওর ঘুম ভাঙ্গাতে পারলাম না। দুইজন নিলয়কে একসাথে দেখতে পারার ঘটনাটা ওকে শেয়ার করা খুব জরুরী, হয়তো এর কোন কারণ দেখিয়ে আমার ভয় কমিয়ে দেবে। আমার প্রবল তৃষ্ণা পাচ্ছে। জিভ পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে, গলার কাছটায় অস্বস্তি। এদিকে চোখটাও আর কথা শুনছে না। আমি চোখ বন্ধ করতে বাধ্য হলাম। ঘুমের ঘোরে পুরোপুরি কাবু হওয়ার আগ মূহূর্তে মনে হলো কানের কাছে ফিস ফিস করে কেউ কিছু বলছে!

সকালে ঘুম ভাঙ্গালো নিলয়। আমি চোখ মেলতেই বললো,

-শরীর খারাপ তোমার? অনেক বেলা হয়ে গেছে, উঠবে না? মা, ফুপু আম্মা খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছেন।

-কয়টা বাজে?

-সাড়ে নয়টা।

এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি! লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। যদিও সকালে নাস্তা বানানোর কাজে আমায় কোন হেল্প করতে হয় না। শুধু সকাল নয়, কোন বেলার রান্নার দায়িত্বই আমার নয়। বিয়ের পর শাশুড়ি মা বলেছিলেন,

-আমি কোনদিন রোজকার রান্না করি নাই, সারাজীবন রান্নার লোক রেখেছি। এখন ছেলের বৌ কে দিয়ে রান্না করাবো? কেয়া, তুমি রান্নাঘরে ঢুকবে না!

রান্না বান্নার সব দায়িত্ব তাই বর্তমানে জোহরার কাঁধে। তবু এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকায় লজ্জা করছে আমার। খাট থেকে নামতে গিয়ে চোখ পড়লো উত্তরের জানালার দিকে। ওটা এখনও খোলা। হুড়মুড় করে কাল রাতের সব ঘটনা মনে পড়ে গেলো। আমি নিলয়ের দিকে তাকালাম। সে তার মোবাইলে কিছু দেখছে, আজ ছুটির দিন তার অফিস নেই। আমি ডাকলাম,

-নিলয়।

-হু।

-উত্তরের জানালাটা কে খুলেছে, তুমি?

-হু।

-কেন? আমি বন্ধ করেছিলাম। খোলার আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না? শোন , এই জানালা আর কোনদিন খুলবে না।

-কী আশ্চর্য! কতো কায়দা কানুন করে এই জানালা তুমি আমাকে দিয়ে খুলিয়েছো ! জং ধরে যাওয়া জানালা খুলতে গিয়ে হাতে ব্যথা পর্যন্ত পেলাম। তুমি বন্ধ জানালা খোলার সময় কতো যুক্তি দিলে- একটা রুমে সব সময় দুইদিকের জানালা খোলা রাখা উচিত। একদিক দিয়ে বাতাস ঢুকে আরেকদিক দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার রাস্তা থাকলে ঘর ঠান্ডা থাকে। তোমার যুক্তি অবশ্য ঠিকই আছে। কাল রাতে উত্তরের জানালাটা খুলে দেয়ায় ঘর খুব ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। আরামের একটা ঘুম হয়েছে। তোমারও তো এতো বেলায় ঘুম ভাঙ্গলো! আর এখন জানালা খোলার জন্য বিরক্ত হচ্ছো!

ফুপু আম্মা নিষেধ করায় আমি নিলয়কে বলতে পারছি না যে তিনি আমকে এই জানালাটার ব্যাপারে সাবধান করেছেন, জানালা বন্ধ রাখতে বলেছেন। আমি তাই রাতে দুইজন নিলয়কে দেখতে পাওয়ার ঘটনাটাই শুধু ওকে জানালাম। নিলয় বললো,

-আরে ধুর! স্বপ্ন দেখেছো! হা হা হা! দুইটা আমি! ভেরি ইন্টারেস্টিং!

এমন ঝকঝকে দিনের আলো আর নিলয়ের হাসি শুনে এখন আমারও মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখেছি। হতেই পারে, রাতে ফুপু আম্মার মুখে ভূত সংক্রান্ত সাবধানবাণী শুনে, হাতে তাবিজ বেঁধে ঘুমাতে গেছি, ভয়ের স্বপ্ন দেখা আশ্চর্যের কিছু না। আমি তাই স্বপ্নটাকে মাথা থেকে দূর করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাস্তার টেবিলে গেলাম

মা এবং ফুপু আম্মা দুজনেই ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমান। তাই সাড়ে নয়টা- দশটার আগে আমাদের নাস্তা খাওয়া হয় না। সবসময় আমি ওনাদের জন্য অপেক্ষা করি। আজ ওনারা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমাকে দেখে শাশুড়ি মা হাসলেন। এটা নিয়মের হাসি। উনি আমাকে বলে দিয়েছেন, সকালে প্রথম চোখাচোখি হলে আমি যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসি। আমার শাশুড়ি মা নানা রকম নিয়ম বানিয়েছেন, যেগুলি মানতে হয়। না মানলে উনি খুব রাগ করেন। যেমন বেডরুম বা নাস্তার টেবিলে খবরের কাগজ পড়া যাবে না। ড্রইং রুমে বসে পড়তে হবে। তারপর দিনের বেলা কখনোই বেডরুমের দরজা বন্ধ করা যাবে না। যতো গরম লাগুক, নিলয় নিজের রুমেও খালি গায়ে থাকতে পারবে না, সবসময় কিছু একটা পরে থাকতে হবে। নিলয় এসব নিয়ম মেনে চলে আমিও মেনে চলি। আমি তাই দিনের প্রথম হাসিটা শাশুড়ি মাকে দিলাম। দেরি করে ওঠার জন্য সরিও বললাম। শাশুড়ি মা বললেন,

-তুমি হয়েছো আমার মতো। সকালের ঘুমটা অনেক আরামের। আমারও ভোরবেলা একটু না ঘুমালে ভালো লাগে না।

ফুপু আম্মার চোখে স্পষ্ট বিরক্তি। তিনি বোধহয় দেরি করে ওঠায় বিরক্ত হয়েছেন।

আমাদের বাড়িতে আমি খাবার টেবিলে সবাইকে খাবার সার্ভ করতাম। এখানে চা পর্যন্ত কাউকে কাপে ঢেলে দেয়া যায় না। শাশুড়ি মায়ের নিষেধ আছে। তিনি বলে রেখেছেন,

-তুমি চা বা পানি কাপে, গ্লাসে ঢেলে দেবে না। নিলয়ের অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে। তারপর খেতে বসে পানি চায়ের জন্য তোমায় ডাকাডাকি করবে।

নিলয়ের প্লেটে খাবারও তুলে দেয়া যায় না। চোখ-মুখ শক্ত করে ফেলে। একদিন বলেও দিলো,

- তুমি আমার প্লেটে খাবার তুলে দেবে না, অন্য কেউ সার্ভ করলে আমি খেতে পারিনা। আমার যা দরকার আমি নিজে নিতে পছন্দ করি। খাওয়ার সময় অকারণে সামনে বসে থাকাও আমার পছন্দ না।

একেক বাড়ীর একেক নিয়ম আমি জানি। আমি তাই নিলয়দের বাড়ীর নিয়ম কানুন মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। মানুষের খাওয়ার ব্যাপারটা দিয়ে তাকে অনেকটা চেনা যায়। যারা সবাইকে সাথে নিয়ে খেতে ভালোবাসে, এরা মিশুক ধরনের মানুষ হয়। যারা একা খেতে ভালোবাসে, এরা অমিশুক হয়। নিলয় যে অমিশুক টাইপের মানুষ আমি জানি। নিলয়ের সাথ আমার দুই বছরের প্রেমের পর বিয়ে। তাই নিলয়ের একা খাওয়ার ব্যাপারটা আমাকে তেমন অবাক করে না।

খাওয়া শেষে শাশুড়ি মা বললেন,

-আজ ছুটির দিন। তোমরা দুজন বাইরে থেকে ঘুরে এসো।

নিলয় ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করে। আবহাওয়া যাই হোক না কেন, শরীর যদি খারাপও থাকে সে ছুটির দিন আমাকে নিয়ে বের হবে। তার বন্ধু বান্ধব কম, তাদের সাথে সময় কাটানোর নেশা আরও কম। ছুটির দিন কাঁচা বাজারে গেলেও সে আমাকে বলে, তুমি সাথে চলো।

আমি বাইরের যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে মায়ের ঘরের দিকে গেলাম জানাতে। দরজার কাছাকাছি আসতে ফুপু আম্মার গলা কানে এলো। তিনি বলছেন,

-মেয়েটাকে তো লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলছো! রান্না করাও না, সারাদিন পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। ছুটির দিন হলেই বরকে নিয়ে টো টো! এই বউ কে কিন্তু ভাবি তুমি পরে সামলাতে পারবে না। সংসারের দায়িত্ব নেয়া না শেখালে পরে কোন দায়িত্ব নেবে না।

মা বললেন,

-তুমি ভেবো না। আমি ঠিক সামলে নেবো। ভালো মতো না বুঝে আমার সংসারের দায়দায়িত্ব আমি কেয়ার ওপর ছাড়বো না। আমার সংসার আমার অনেক যত্নে গড়া!

ওনারা আমাকে নিয়ে আলোচনা করছেন , আমি তাই আর রুমে ঢুকে ওনাদের অপ্রস্তুত করতে চাইলাম না। নিলয় নিজের পছন্দে আমায় বাড়ির বৌ করে এনেছে। বাড়ির অন্যদের কাছে আমি উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। তাই আমার ব্যাপারে আশংকা থাকতেই পারে। আমি মানুষ খারাপ নই। সময়ের সাথে সাথে মা আর ফুপু আম্মা আমায় আপন করে নেবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।

নিলয় যাওয়ার আগে গলা ছেড়ে বললো,

-মা যাই!

এবার মা হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে আসলেন। দ্রুত দরজার পাশের শু র‍্যাক খুলে আমার একজোড়া জুতা বের করে আমার সামনে রেখে বললেন,

-নাও মা! তোমার জুতা!

আমি ভাবতেও পারিনি উনি এই কান্ড করবেন আমি ওনার হাত চেপে ধরে বললাম,

-মা! আপনি এটা কী করলেন! ছিঃ ছিঃ! আপনি কেন আমার জুতা ধরবেন?

নিলয় মনক্ষুণ গলায় বললো,

-মা! আর কখনও এরকম করবে না। তুমি ওর জুতা বের করবে কেন?

মা নিলয়ের গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

-বৌ তো মেয়ের মতোই রে। কেয়াকে আমি নিজের সন্তানের মতো দেখি। এই জুতাটা ওর শাড়ির সাথে ম্যাচ করে তাই বের করে দিলাম। কি হয়েছে তাতে? কিচ্ছু হয়নি!

বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম ঠিকই কিন্তু একটু আগের ঘটনাটা থেকে আমি বের হয়ে আসতে পারছিলাম না। মা আর ফুপু আম্মা আমাকে নিয়ে শংকিত। মা নিলয়ের সামনে আমাকে একটু বেশি ভালোবাসা দেখান। নিলয় না থাকলে ধমকের সুরে কথা বলেন। উনি কি আমাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন? উনি কি ভাবছেন, আমি নিলয়ের কাছে ওনার খারাপ ব্যবহারগুলির কথা বলে দেবো? তাই উনি নিলয়ের সামনে আমার জুতা বের করে দেখাচ্ছেন, আমার ব্যাপারে উনি কতোটা উদার!

নিলয়ের অবর্তমানে শাশুড়ি মা আমার সাথে অনেক কিছুই করেন, যেমন সেদিন আমাকে শাম্মি কাবাবের একটা প্লেট সামনে ধরে বললেন,

-বৌমা ! খাবে?

আমি হাত বাড়াতেই উনি প্লেটটা সরিয়ে নিয়ে বললেন,

-! তুমি পছন্দ করো না, ঠিক আছে!

বলে হাসতে হাসতে প্লেট নিয়ে চলে গেলেন।

আমি তার এমন আচরণে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকলাম। প্রেম করে বিয়ে করেছি, এটুকু তো শ্বশুর বাড়িতে সহ্য করতেই হবে!
মাঝে মাঝে খাবার টেবিলেও মা আমাকে জব্দ করার চেষ্টা করেন আমি, মা আর ফুপু আম্মা খেতে বসি। মোট তিনজন। কিন্তু মাছের বাটিতে দেখা যাবে মাছ দুই টুকরা! খেতে বসে মা বলবেন,

-আমি মাছ নেবো না, কেয়া তুমি নাও।

ফুপু শাশুড়ি হাসতে হাসতে মাছ নিজের প্লেটে নিয়ে বলবেন,

-আমি বাবা মাছ ছাড়া ভাত খেতে পারি না। মাছে- ভাতে বাঙ্গালী!

আমি শাশুড়ি মাকে না দিয়ে মাছ নিজের প্লেটে তুলতে পারি না। তাই সবজি দিয়ে খেয়ে উঠি শাশুড়ি মা তখন মাছ নিজের প্লেটে তুলে নেন আর ফুপু শাশুড়ির সাথে মিলে ফিক ফিক করে হাসেন।

নিলয়দের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট ভালো। আমি নিজেও স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে। খাবার নিয়ে এইসবব নীচতা আমাকে খুব আহত করে কিন্তু নিলয়কে এসব কিছু জানাই না আমি

দুজন বিধবা,বয়স্কা মানুষ, এরা কোন কারণে আমাকে তাদের সংসারে আপন ভাবতে পারছেন না। আরেকটু সময় গড়াক, ওনারা নিশ্চয় বুঝবেন যে, আমি ওদের শত্রু হওয়ার জন্য এই বাড়িতে আসি নাই। আমি ওদের শুভাকাঙ্খী।

আমি গাড়িতে নিলয়ের পাশে বসে এসবই ভাবছিলাম।নিলয় বললো,

-চুপচাপ কেন?

আমি বললাম,

-ছুটির দিন আসলেই মা আর ফুপু আম্মাকে এভাবে রেখে চলে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। ওনাদের সাথে নিতে পারি অথবা বাসাতেও তো একসাথে সময় কাটানো যায়, তাইনা?

-মা আর ফুপু আম্মা যখন বেড়াতে যান, ওরা কি তোমায় সাথে নেন? নেন না, কারণ ওদের সাথে গেলে তুমি বোর হবে। আবার আমাদের সাথে ঘুরতে ওদের ভালো লাগবে না। এই যে আমরা এখন একটা পার্কে গিয়ে বসবো, বাদাম খেতে-খেতে গল্প করবো, তারপর নৌকা করে ঘুরবো। মা আর ফুপু আম্মার এগুলি ভালো লাগবে? আর সন্ধ্যার পর থেকে তো বাসাতেই থাকবো ওনাদের সাথে।

-তবু, ওনারা হয়তো চান যে আমরা ছুটির দিনটা বাসায় থাকি।

-কেয়া! তুমি আমার মা-ফুপুদের চেনো নাই। এরা অনেক বড় মনের। ট্রিপিক্যাল বাঙ্গালী শাশুড়িদের মতো না।

আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করলাম। গত সপ্তাহে বাবা এসেছিলেন। শাশুড়ি মা অনেক নাস্তার আয়োজন করলেন। বাবা বললেন,

-আমি তো এতোসব খেতে পারবো না ডাক্তারের নিষেধ আছে। নিয়ম মেনে খাই। বিয়াইন যদি খাওয়াতেই চান তো শুধু এক কাপ চা খাওয়াতে পারেন।

আমি জানি বাবা বিকালে চা ছাড়া কিছু খান না। জোহরা সব দিল কিন্তু চা দিল না। আমি নিজেই গেলাম চা বানাতে। গিয়ে দেখি চায়ের কৌটা খালি। অথচ সেদিন সকালেও কাশি হচ্ছিল বলে রান্নাঘরে লং আনতে গিয়ে দেখেছি চা রাখার কাঁচের জারটা ভরা। চা কোথায় গেলো?

জোহরাকে প্রশ্নটা করায় বললো,

-চা শ্যাষ!

হঠাৎ দেখি শাশুড়ি মা কিচেনের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন,

তিনি বললেন,

-চা তো শেষ হয়ে গেছে কেয়া। তুমি তো রেডিই আছো, চট করে একবার নিচের দোকান থেকে চা কিনে আনো তো মা। জোহরাকে পাঠাবো না। এতো বড় মেয়ের দোকানে যাওয়া ঠিক না।

আমি আলমারি থেকে পার্স নিয়ে দোকানে যাবো ঠিক তখুনি বাবা বললেন, আর বসবেন না। তার একটা জরুরী কাজ আছে। খালি মুখে বাবা চলে গেলেন!

আমার শাশুড়ি মায়ের পর পর তিনটা সন্তান মারা যাওয়ার পর নিলয়ের জন্ম হয়েছে। বছর দুই হলো স্বামীকেও হারিয়েছেন। নিলয়ের জন্য তার পছন্দের একটি মেয়ে ছিল। নিলয় তাকে বিয়ে না করে আমায় বিয়ে করতে চাওয়ায় তিনি বাঁধা দেননি। ঘটা করে আমার সাথে নিলয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমাকে মন থেকে মেনে নেননি, আমাকে মানসিক ভাবে কষ্ট দেয়ার জন্য নানানটা করতে থাকেন।

সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে বাড়িতে ফিরে দেখলাম জোহরা চলে গেছে। জোহরার মা অসুস্থ, খবর এসেছে গ্রাম থেকে। জোহরা চলে যাওয়ায় আমার ভালো লাগলো দুটি কারণে। এক, যদি ফুপুর কথা সত্যি হয়, তবে জোহরার ওপর জ্বিনের আসর আছে। এরকম মানুষ কতোটা ক্ষতিকর আমি জানি না কিন্তু কেমন একটা ভয় লাগে। জোহরা না থাকার মানে হচ্ছে, বাড়িতে ভয় পাবার মতো কোন মানুষ থাকলো না। এটা স্বস্তিকর। আর দুই হচ্ছে, এখন রান্নাবান্না করার একটা সুযোগ পাওয়া যাবে। আমি রান্না করতে খুব ভালোবাসি।

আমি কোমর বেঁধে সংসারের কাজে নেমে পড়লাম। যদিও একটা ঠিকা বুয়া এসে কিছু কাজ করে দিয়ে যায়, কিন্তু রান্নার দায়িত্বটা পুরো আমার। কিচেনে খুন্তি নেড়ে রাঁধতে আমার ভালো লাগে। সংসারটাকে আরও বেশি আপন আপন লাগে।

শাশুড়ি মা আর ফুপু আম্মা শতমুখে আমার প্রশংসা করেন। নিলয়কে তখন খুব সুখী সুখী দেখায়।

কিন্তু একদিন নিলয় অফিসে যেতেই শাশুড়ি মা এসে বললেন,

-কিচেনের জিনসপত্র এমন উল্টাপাল্টা করে সাজিয়েছো কেন? কিচেনে ঘড়ি, ক্যালেন্ডার লাগিয়েছো। এগুলি সড়াও। আমি যেভাবে সাজিয়েছি সেভাবে সব থাকবে। তুমি কিছু পরিবর্তন করবে না। আর আজ নতুন রান্নার মেয়ে আসবে। তুমি আর কিচেনে ঢুকবে না।

নতুন যে কাজের মেয়েটি এলো তার নাম সোমা বয়স পনেরো, ষোল। রান্না তেমন জানে না। তাকে শিখিয়ে নিতে হবে। শেখানোর দায়িত্ব আমি নিতে চাইলাম, কিন্তু পেলাম না। দায়িত্ব নিলেন ফুপু শাশুড়ি।

সোমা মেয়েটা ভালোই। জোহরার মতো মুখরা নয়। কিন্তু মেয়েটা কিছুদিন পর থেকে আমাকে কেমন এড়িয়ে চলতে শুরু করলো। কোন কিছু চাইলে না শোনার ভান করে। আমি এটাকে তেমন পাত্তা দিলাম না। হয়তো সোমার ওপর শাশুড়ি মহলের নির্দেশ আছে এমন

এই বাড়িতে ডাইনিং টেবিলের কোন চেয়ারে কে বসবে, তা নির্ধারিত। আমার জন্য বরাদ্দ দেয়ালের দিকের চেয়ার। একদিন রাতের খাবারের জন্য ডাইনিং আসতেই নজরে পড়লো ফুপু আম্মা আমার চেয়ারের সামনে যে খাবারের প্লেটটা রয়েছে তাতে ভাত বেড়ে তার ওপর লবনের মতো কিছু একটা ছিটিয়ে দিচ্ছেন আমাকে দেখে বললেন,

-এসো। হুজুরের লবন পড়া তোমার ভাতে দিয়ে দিলাম। আল্লাহর রহমতে তুমি হেফাজতে থাকবে। কোন ভূত-প্রেতের নজর তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

আমার ভালো লাগলো। ফুপু আম্মা আমার ভালোমন্দ নিয়ে ভাবছেন আমি খুশি হয়ে লবন পড়া দেয়া ভাত খেয়ে নিলাম। ফুপু আম্মা দুই বার হজ্ব করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাকে আমার মন্দ মানুষ মনে হয় না। শাশুড়ি মাকেও মনে হয় না, উনি যা করেন তা একধরনের অসহায়ত্ব থেকে করেন। তার সংসার বৌ এর হয়ে যাবে, এই ভয় থেকে করেন।

একদিন বিকালে চা খেতে বসে শাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেসা করলাম,

-মা! আপনি উত্তর দিকের জানালাটা কেন বন্ধ করে রাখতেন?

-উত্তরের জানালা খুললে পাশের বাড়ির পিছন দিকটা পড়ে। ওদের টয়লেটগুলি এদিকে। ঘেন্না লাগতো আমার যখন উত্তর দিকের জানালা দিয়ে বাতাস আসতো। আমি তাই ওটা খুলতাম না। তোমার মনে হয় ঘেন্না-পিত্তি কম তুমি তো দেখি খুলে বসে আছো। তোমার শ্বশুর যখন তিনতলা আর চারতলা তুললো, তখনও আমি ওপরের ফ্ল্যাটগুলিতে উত্তরে জানালা রাখিনি। যারা ভাড়া থাকতে আসবেন, তাদেরও তো ঘেন্না লাগতে পারে!

-মা! আরেকটা প্রশ্ন ছিল?

-বলো।

-আপনি মাগরিবের আযানের আগে এমন হন্তদন্ত হয়ে উত্তর দিকের বারান্দার দরজা লাগান কেন?

- বাবা! তুমি এটাও খেয়াল করেছো! তা এতে সমস্যা কী বাছা? হাদীসে আছে, মাগরিবের আযানের ওয়াক্তে ঘরের বাইরে না যাওয়া বাচ্চারা বাইরে থাকলে তাদের ঘরের ভিতর ডেকে নেয়া। এসময় খারাপ বাতাস দৌড়াদৌড়ি করে। কাউকে সামনে পেলে তার ক্ষতি করে। আমি তাই মাগরিবের ওয়াক্তে সাবধান থাকি।এই সময় চিরকাল বাড়ির সদর দরজা বারান্দার দরজাগুলি আমার মা বন্ধ রাখতেন। আমিও রাখি। তাছাড়া উত্তর দিকে একটা পুরানো কবরস্থান আছে। বারান্দা থেকে দেখা যেতো আগে। এখন সামনে বাড়ি-ঘর উঠে যাওয়ায় আর দেখা যায় না। কবরস্থানের দিকের দরজা জানালা মাগরিবের সময় বন্ধ রাখতে হয়, তুমিও রাখবে।

আমি "জ্বি, আচ্ছা" বলে মেনে নিয়েছি। মা বা ফুপু আম্মা , কারও সাথেই আমি তর্কে যাই না, শুধু শুনি।

সেদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে নিলয় বললো,

-চলো, ছাদে যাই। ছাদে বসে চা খাবো আর তোমার গান শুনবো।

এই বাড়িতে বৌ হয়ে আসার পর বহুবার সন্ধ্যায় ছাদে কাটিয়েছি আমি আর নিলয়। কিন্তু জোহরার ঘটনার পর আমার কেমন ভয় লাগে, আমি ছাদে আর যাই না। আমি রাজি হলাম না কিন্তু নিলয় একরকম জোর করে আমায় ছাদে নিয়ে গেলো। আমকে বললো,

-দেখো, চারদিকে কোথাও ভয়ের কিচ্ছু নাই।

আমারও তাই মনে হলো। আশেপাশের বাড়ির আলো ছাদে এসে পড়ছে , তাছাড়া সিঁড়ি ঘরে লাইট জ্বলছে, তার আলো জ্যামিতিক আকারে ছড়িয়ে রয়েছে ছাদে। সেই আলোর প্রভাবে চারপাশে কোন রহস্য দানা বাঁধতে পারেনি। বেশ বাতাস ছাদে। বেলি ফুল ফুটেছে অনেক। তার সুগন্ধে ছাদটাকে বরং খুব বেশি উপভোগ্যই লাগছে। নিলয় বললো,

-ছাদের এক কর্নারে একটা ঘর করবেন মা, কাল বলছিলেন।

-কেন? একটা ঘর করে কি হবে?

-মা বলছিলেন, তিনি ঘরে বসে বসে নাতির খেলা দেখবেন। নাতি ছাদে খেলবে, তিনি ঘরে বসে দেখবেন।

-নাতি কে?

-হা হা হা ! তোমার ছেলে! মানে আমাদের যে সন্তান হবে, সে!

এবার আমি হেসে ফেললাম। অনাগত সন্তানের জন্য এই বাড়িতে কিছু একটা পরিকল্পনা হচ্ছে, এটা ভাবতে আমার খুব সুখ লাগলো। শাশুড়ি মায়ের জন্যও মনটা ভালোবাসায় ভরে উঠলো। যদিও আমি বাড়ির কাউকে এখনও কিছু বলিনি, তবে আমার ধারনা আমি হয়তো কনসিভ করেছি। আমার এক ডাক্তার বান্ধবীও সব শুনে আমাকে তাই বললো। সে আমাকে একটা টেস্ট করতে বলেছে সেটা করলে নিশ্চিত জানা যাবে। আমি নিলয়কে ব্যাপারটা বললাম। নিলয় বললো,

-তুমি টেস্ট না করে চুপ করে বসে আছো কিভাবে? মাই গড! এতো ধৈর্য কৈ পাও?

-ডিসপেনসারি থেকে কিনে আনতে আমার লজ্জা করছিল।

-ওকে ! আমি এখনই তোমায় এনে দিচ্ছি।

কথাটা বলে নিলয় আমার হাত ছেঁড়ে একটা দৌড় লাগালো। সে এখনই ওষুধের দোকানে ছুটেছে। আমি পিছন থেকে নিলয়কে ডাকলাম, কিন্তু মনে হলো শুনতেই পেলো না।

ছাদে এখন আমি স্পম্পূর্ণ একা! আমি ছাদের বাথরুমটার দিকে তাকালাম। ওদিকটা অন্ধকার। এই বাথরুমের ছাদেই জোহরা সেই নগ্ন মহিলাকে দেখেছিল। ধরা যাক, মহিলা পাগলী নয়, ফুপু আম্মার কথা মতো সে জ্বিন -ভূত কিছু। যদি ফুপু আম্মার কথা সত্যি হয়, যদি নগ্ন মহিলা এখন আমার সামনে চলে আসে! কথাটা ভাবতেই ভয়ে আমার হাত- পা শির শির করতে শুরু করলো আমি দ্রুত ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ছাদের তালা চাবিটা নিলয় খুলে রেখেছে উত্তর দিকের রেলিং এর পাশে। ওটা নিতে হলে আমাকে এখন ছাদের উত্তর দিকে যেতে হবে। কোন দরকার নেই। ছাদে তালা লাগানোর পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আমি সিঁড়ির দিকে দ্রুত পায়ে রওয়ানা হলাম। কিন্তু সিঁড়িতে পা দেয়া মাত্রই দেখলাম, সোমা উঠে আসছে। সে আমাকে বললো,

-আপনেরে মামী নিচে বুলায়। মেহমান আইছে।

সোমাকে দেখে আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। আমি বললাম,

- তালা -চাবি ছাদে রেখে এসেছি। ওটা নিয়ে আসো। আমি নিচে যাচ্ছি। তুমি তালা দিয়ে তারপর আসবে।

সোমা বললো,

- ভাবি যাইয়েন না। আমার ডর লাগে। আমি নাহাররে ছাড়া ছাদের বাথরুমেও আহি না। অইদিন যা ডরানো ডরাইছিলাম!

-কেন ? কি হয়েছিল?

-আপনে আমার লগে এট্টু আহেন। ছাদের তালাটা আনি।

কাজের মেয়েরা ছাদের বাথরুম ব্যবহার করে। ছাদ খোলা রেখে যাওয়া আসলে নিরাপদ না। কখন কে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে। আমি তাই সোমার সাথে ছাদের উত্তর দিকে গেলাম। তালা চাবি পাওয়া গেলো।

আমি বাইরে তাকালাম। চারদিকে বাড়ি ঘরের আলোয় আলোকিত। শুধু একটু দূরে, এক মাঠ অন্ধকার যেন ওঁত পেতে বসে আছে। সেখানটায় তেমন কোন আলো নেই। যেন কোন অন্ধকার হাত সেখানকার সব আলোর গলা টিপে মেরেছে! সম্ভবত ঐখানেই কবরস্থানটা আছে! তাই ওখানে কোন বাড়ি ঘর না থাকায় এতো অন্ধকার।

ঠিক তখনি আমাদের চারদিকটাও ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে গেলো। আমার মনে হলো কবরস্থানের অন্ধকার এই ছাদে চলে এসেছে। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে বুঝতে পারছি তবু আমার আর সোমার কাছে এই অন্ধকারটা সহজ স্বাভাবিক হয়ে ধরা দিলো না। সোমা মা গোবলে একটা দৌড় দিলো। সাথে আমিও। ছাদের দরজা খোলা পড়ে রইল। 
সোমা তালা আর চাবি হাতে নিয়ে পালিয়েছে। আমি অন্ধকারে দুমদাম সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারছি না, আমাকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলেছে ডাক্তার বান্ধবী। তবু যতোদূর সম্ভব দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামছি আমি। সাথে আয়াতুল কুরসি পড়ছি। সোমাও এই ছাদে ভয় পেয়েছে, বলেছে একটু আগে। তারমানে ছাদে আসলেই কিছু আছে। এই অন্ধকারে সে আমার পিছন পিছন আসছে না তো!

চারতলা থেকে দোতলা এতো দূর আর কখনও মনে হয়নি। সিঁড়ি যেন আর শেষ হয় না। ভয়ে আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে। অবশেষে দোতলায় এসে পৌঁছালাম।

দরজা খুললেন আমার ফুপু শাশুড়ি, আমি ততোক্ষণে ভয়ে ঘেমে নেয়ে উঠেছি। আমাকে দেখেই তিনি আমার মনের অবস্থা বুঝে ফেললেন, বললেন,

-কি , ভয় পেয়েছো নাকি? এই রাতে কেন গেলা ছাদে? আমার কথা শোনার দরকার ছিল মেয়ে তোমার, বুঝেছো?

আমার খুব রাগ হলো নিলয়ের ওপর, আমাকে ছাদে কেমন একলা রেখে চলে গেল সোমার ওপরও রাগ লাগছিল, যখন আমাকে ছাদে ডাকলো ভয় পাচ্ছে বলে, আমি গেলাম অথচ ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ার পর সে আমাকে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে এলো। আমি ডাইনিং টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেলাম। ফুপু আম্মা আমকে এক বোতল পানি এনে দিয়ে বললেন,

-এটা হুজুরের পড়া পানি। বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে নাও।

-আমি খেয়ে নিলাম।

নিজের ঘরে এসে সোমাকে ডেকে বললাম,

-এভাবে চলে এলে কেন তুমি?

-ভাবি গো! এই ছাদে পেত্নী থাকে গো ভাবি! আমি দেখছি। দেখছি বইলা কারেন্ট গেছে পড়ে আমার এমুন ডর লাগছে গো ভাবি , আমি পলাইছি। ক্ষেমা দেন, আপনেরে সাথে লওনের কাম আছিলো।

-কি দেখেছো তুমি ছাদে?

-পরশু দুপুর বেলা গোসল করতে গেছি। গোসল করতে গেলেই তিনতলার এক ব্যাটা ছাদে আইসা ঘুর ঘুর করে। হের লাইগা আমি ছাদের গেইট বন্ধ কইরা হ্যাসে বাথরুমে গেছি। গোসল কইরা বাড়াইছি, ওমা! এক বুড়ি ছাদে হাঁটতাছে। আমারে কয়,

- ছেমড়ি! তোর নাম কী? এই বাড়ীত কবে আইছোস?

আমি কই,

-তুমি ছাদে উঠলা কেমতে? ছাদ তো ভিতর তন বন্ধ কইরা রাখছি? আগের থন ছাদে উইঠা বইয়া ছিলা? কোন বাড়ির তুমি?

বুড়ি কতা কয় না হাইটা বাথরুমে ডুইক্কা গেলো। আমি গেইটের কাছে গিয়া দেহি ছাদের গেইট যেমুন বন্ধ কইরা রাখছিলাম, অমুন বন্ধই আছে। বাথরুমে উঁকি দিয়া দেহি বুড়ি নাই। নাই তো নাই! বাথরুমে, ছাদে কুনোখানে নাই! ভাবি! দেহেন , কইতে গিয়া আমার শইলের পশম খাড়া হইয়া যাইতেছে!

আমি সোমাকে বিদায় করলাম। এসব কথা আমি আর নিতে পারছি না। আমার শরীর খারাপ লাগছে। নিলয় ফিরে আসলে ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করলো না। সে আমাকে ছাদে এক ফেলে চলে গেছে। কিন্তু নিলয় আমার অভিমান এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিলো। ক্ষমা চেয়ে,ভালোবেসে, আবদার করে সে যেটা বললো, সেটা হলো,

-প্লিজ তুমি টেস্টটা এখুনি করে ফেলো! আমি এক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে পারছি না।

আমি নিলয়ের অনুরোধ রাখলাম। আর মুখোমুখি হলাম জীবনের চরমতম আনন্দের। টেস্টের ফলাফল নিশ্চিত করে বলছে, আমি মা হবো। আর কয়েক মাস, তারপর একটা ফুটফুটে বাবুকে আমার কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুরবো আমি। ওকে আদর করবো, খাওয়াবো, ঘুম পাড়াবো...।আরও কতো কী! পথিবীটাকে প্রচন্ড সুখের জায়গা বলে মনে হতে থাকে আমার। এতো সুখী আমার নিজেকে আর কখনও মনে হয়নি!

নিলয় বাচ্চাদের মতো খুশী হলো সে কি থেকে কী করবে ভেবেই কুল পাচ্ছে না। আমাকে বললো,

-মা আর ফুপু আম্মাকে বলে দোয়া নিয়ে এসো, যাও।

-আমি বললাম,

-আমার লজ্জা লাগবে!

-ওনারা কী পরিমান খুশী হবেন, তুমি জানো না। জানাতে তো হবেই। এখন তোমার কী করণীয় সে ব্যাপারে ওনারা তোমাকে পরামর্শ দিতে পারবেন। আজ জানালে অসুবিধা কি?শুভস্য শীঘ্রম!

আমি গেলাম। মা খুব খুশি হলেন, আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন , দোয়া করলেন। ফুপু আম্মার ঘরে গিয়ে খবরটা দিতে তিনিও একই রকম আচরণ করলেন। আমি খুশি মনে চলে আসছিলাম, পিছন থেকে আমাকে ডাকলেন ফুপু আম্মা। আমায় বললেন,

- আমাদের যেমন ডিম ওয়ালা মাছ পছন্দ, জ্বিনদের তেমন ডিমওয়ালা বৌ -ঝি পছন্দ। তোমার পেটে এখন ডিম তাই খুব সাবধানে থাকবে! খুব সাবধান!

উপরে