NarayanganjToday

শিরোনাম

এরেঞ্জ ম্যারেজ (পর্ব-২)

সামান্তা মিজান


এরেঞ্জ ম্যারেজ (পর্ব-২)

বাবার হাত ছেড়ে আমি সাজানো গাড়িতে গিয়ে উঠলাম, এটা অনেক বেশি সাজানো প্রাইভেট কার। পেছনে তিনটা সিট, আমি বসতে গিয়েই দেখি দুষ্টু লোকটা মানে আমার ওই হতচ্ছাড়া বর মহাশয় আগেই ঢুকে বসে আছে। আমাদের সাথে ওনার ছোট বোনও বসবে, ওর নাম তনয়া আমরা যেদিন রেস্তোরাঁয় মিট করি সেদিন ও গিয়েছিল ভাইয়ের সাথে। আমি তার ছোট বোনকে বললাম, ‘তুমি মাঝে বসো।’ কিন্তু সে খিলখিল করে হেসে বললো, ‘তা হবে না, আমার ভাইকে ছেড়ে আর দূরে থাকা যাবে না। এবার থেকে সব সময় আমার ভাইয়ের পাশেই থাকবে।’ প্রচন্ড হতাশ আমি, ধুর! ভাল্লাগেনা আমার, পুরো বাড়িতে এই জনই ভালো ছিলো সেও সময় বুঝে পল্টি নিলো! ওর সাথেও কাট্টি। সবাই তাড়া দিচ্ছে উপায় না পেয়ে ওই লোকটার পাশেই বসতে হলো।

এখন তো তনয়ার সাথেও কাট্টি, আমি কোন দিকে হেলে বসবো বুঝতে পারছি না। কারণ গাড়ি দ্রুতগতিতে চললেও হঠাৎ সিগনাল এর জন্য গাড়ি দ্রুত ব্রেক কষলো আর আমি, ইশ! মাগো! এক্কেবারে দুষ্টু লোকটার গায়ের ওপর হেলে পড়লাম। ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে যিনি বসা এই লোকটারই বন্ধু হবে, বললো, ‘ভাবী কাঁধে হেলান দিন আর ঝাঁকি লাগবে না’ বলেই একটা শয়তানি হাসি দিলো। আমি ‘নো থ্যাংকস’ বলে শক্ত হয়ে বসলাম। আগেই জানতাম সবগুলো ওই লোকটার মতোই।

একটা সাজানো বাড়ির সামনে আমাদের গাড়িটা সহ অনেক গুলো গাড়ি এসে থামলো। সবাই নামতে শুরু করলো, আরে বাপ্রে!  আমি নামবো কি, ওই দেড়টনি শাড়ি গয়না নিয়ে নড়াই তো মুশকিল। হঠাৎ খুব সুন্দর মতো একজন বললো, ‘তন্ময়, বউকে নামাও তারপর গেটে নিয়ে এসো বরন হবে।’ ওনার সাথে আলাপ হয়েছে, উনি ওই দুষ্টু লোকটার কাজিনের বউ। দেখতে প্রতিমার মতো সুন্দরী আর হাসলে তো আরো সুন্দর লাগে, ইনি দেখতে সুন্দর কিন্তু একটা পচা কাজ করেছে। কতো ভালো মানুষের মতো পাকাকথার দিন বললো, ‘তোমার সাথে পরে কথা হবে কেমন? তোমার ফোন নাম্বার টা দাও।’ আর আমি বেচারি ভালো মানুষের মতো ফোন নাম্বারটা দিলাম আর রাত্রি হতেই আননোন নাম্বার থেকে ফোন। যেই না ফোনটা ধরেছি দেখলাম ওই দুষ্টু লোকটা। তাও আবার কি কথার ছিড়ি!  বলে কিনা আমার ঘুম না পেলে সে এসে ঘুম পাড়িয়ে দেবে! বললেই হলো নাকি? আমার ওমন সুন্দর ফুলওয়ালা চাদর বিছানো বিছানায় আর ফেভারিট হোৎকা টেডি কিনা শেয়ার করবো ওই লোকটার সাথে! সাথেই ফোন কেটে দিয়েছিলাম।

ওহ হো ভাবতে গিয়ে মনে হলো, এ বাবা আমি তো হোৎকুটাকে বিছানায় ফেলে চলে এসেছি। ইশ! ওকে ছাড়া আমি ঘুমোই না কখনো। এমন কি ঘুরতে গেলেও ওকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে মামনীর সাথে হয়ে যায় একচোট। মধ্যস্থতা করে দেয় বাবা, আমি আজ সব ফেলে চলে এসেছি, পছন্দের বিছানা, নিজের বালিশ (যেটা কোন ভাবে বাসায় কাজ করা মেয়েটা ভুলে বদলে দিলে আমি ঘুমোতেই পারি না) গ্লাস - প্লেট (আমি যে অন্যের ইউজ করাগুলো নেই না) হোৎকা টেডি আর এমনকি আমার বাবাটা পর্যন্ত।

আমাকে আরবি পড়াতেন যে হুজুর, তিনি বলতেন মানুষ নাকি মারা গেলে নিজের পছন্দের সব কিছু এমন কি কাছের মানুষদেরও ফেলে একা চলে যায়। তবে কি আমি মারা গেছি? আর যদি তাই হয় তবে, এখনকার সময়টা কি? আমি কি তবে নতুন করে নতুন জন্ম নিলাম যেখানে আমার সব পরিচয় অস্তিত্ব নতুন? মাথাটা গুলিয়ে যাচ্ছে কেবল, অস্থিরও বোধ হচ্ছে, তার মধ্যেই দেখলাম দুষ্টু লোকটা গাড়ির দরজা খুলে নামছে। আর তখনি বাম পা বাড়িয়ে মারলাম এক ল্যাং! (চলবে)

উপরে