NarayanganjToday

শিরোনাম

ছোঁওয়া

জাহানারা ইয়াসমীন


ছোঁওয়া

তোমাকে প্রতিটি মুহূর্তে চাই। তার মানে এই নয় দুইশো ছয়টা হাড়ের ওপর যে মাংসের সংসার, তাকে কামনা করি। আবার আমি কামজ মানুষ নই, তাও নয়। ভালোবাসি কিনা জানি না। কিন্তু তোমাকে খুব স্পর্শ করতে ইচ্ছে হয়। অনুভূতি তির্যক এক আকর্ষণ হয়তো। তাই যতোই বলি শরীরে আমার লোভ নেই, সেটা মিথ্যে বলা হবে।

শরীর ঠিক ততক্ষণই শরীরকে জাগায়, যতক্ষণ মন জেগে থাকে। রক্তের কণিকা বেয়ে হৃদয়ে কাঁপন তৈরি হয়; একটা শূন্যতা তৈরি হয় কোন পাওয়াকে ঘিরে। ওই শূন্যতা আমি ভালোবেসেই অনুভব করি। আর তখনই তোমার শরীরী অবয়বকে জড়িয়ে নিই। অধর স্পর্শ করি। চুলের অরণ্যে মায়ার পরশ বুলিয়ে দিই। খুব একা মনে হলে তোমার বুকের চেয়ে প্রিয় চারণভূমি আর হয় না।

কখনও তোমার সাথে দেখা যদি নাও হয়, আফসোস নেই। মনে মনে আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখেই শান্তির ছোঁয়া পাই। তোমার পিঠে নখের আঁচড়ে আমার বন্যতা জানিয়ে দিই। বন্ধ চোখের ওপর তোমার ঠোঁটের উষ্ণতা কি যে সুখ দেয়। কপাল জুড়ে তোমার ছোট্ট একটা চুমু, দাবানল থামিয়ে দিতে পারে। দুহাত বাড়িয়ে তোমার আলিঙ্গন, সেটা স্বর্গীয় আনন্দ।

একজীবনে মানুষ কতো কিই পায়, কতোকিছু হারায়। আমার এসব পার্থিব হিসেব কষতে কখনও মন চায়নি। কি পাবো জেনে ভালোবাসার মত পবিত্র একটা সম্পর্কে ফাঁদ পেতে দিতে ইচ্ছে হয়নি। এরচেয়ে এইই বেশ, পাবো না মেনে নিয়েই পেয়ে বসে আছি। দেখা না হোক, পাওয়া তো হলো। আমার বোকা পৃথিবীতে তুমি চন্দনের তিলক হয়েই থেকো।

জগতে প্রতিটি সম্পর্কের একটা সমীকরণ থাকে। তোমাকে চাই ভালোবাসার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমি তোমার ঠোঁট, চিবুক, ঘাড় জুড়ে আদর লেপ্টে দিই। বিনিময়ে আমার কিচ্ছু চাইনে। তোমার আমার অপটু বন্ধনের কোন শিরোনাম নেই। যেকোনো সময় তুমি আমি ছিটকে কে কোথায় বিস্মৃত হয়ে যাবো। কিন্তু আমি জানি তুমি যতোদিন বাঁচবে শিহরিত হবে এই অবাধ্য প্রেমের কথা মনে করে। স্পর্শের মাতলামো স্থির হয়ে যায় এক সময়। এক আজন্ম কিশোরী তোমায় মাতাবে ভেতরে ও বাহিরে।

ভালোবাসা বিনোদন নয়। এটি দানপত্রও নয়। ভালোবাসা বিনিময় চায়। মন থেকে শরীর, শরীর ছুঁয়ে মন, এমন বিচরণে ভালোবাসা জগতের সব গণিত অস্বীকার করার ক্ষমতাও রাখে। তোমাকে ভালোবাসি এই সত্যটুকু প্রমাণ করার মত ধূর্ত আমি নই। বোকার স্বর্গে তুমি আমার একটি মাত্র দেবতা। জীবনে বেঁচে থাকার অনেক উপকরণ হয়তো আছে, উপলক্ষ নগন্য। তুমি আমার বেঁচে থাকার সেই উপলক্ষ।

ভালো না বেসেও বেঁচে তো আছে কতো মানুষ। আমিও ছিলাম। ওই খোলসেই তুমি প্রথম বৃষ্টির জলকণা হয়ে এলে।

তোমায় শুধু ভালোবাসি বলেই তোমার সব খুঁতগুলোকেও ভালোবাসি। ভালোই বাসি, মন্দ বাসি না, জেনো।

উপরে