NarayanganjToday

শিরোনাম

এরেঞ্জ ম্যারেজ (পর্ব-৩)

সামান্তা মিজান


এরেঞ্জ ম্যারেজ (পর্ব-৩)

ল্যাং খেয়ে অল্পের জন্য মাটিতে গড়াগড়ি খান নি, আমি আফসোস এ বললাম, ‘উপস্’! তনয়া ভাবলো আমি বুঝি তার ভাইয়া হোচট খাওয়ায় দুঃখ পেয়েছি। হেসে বললো, ‘বাহ্! এখন থেকেই বরের জন্য তো খুব মায়া!’ মনে মনে বললাম, মায়া না ছাই! ল্যাং আরেকটু জোরে কেন মারলাম না সেই আফসোস এ মরছি।

ভয় একটাই উনি যদি উনার বাড়ির লোকদের বলে দেয় যে আমি ল্যাং মেরেছি! উনি হোচট এমনি খান নি? ইশ! শত্রু পুরীতে এসে কি বিপদ রে বাবা! শত্রুপুরীই তো প্রথম, যখন উনারা দেখতেন এলো, তাদের বেশ পছন্দ হলো। কিন্তু সে তো যেতে চায় না কোথাও এক্ষুনি।

হ্যাঁ বিয়ে যেহেতু একটা করতেই হয় করবে, যেমন ছোট মামার বিয়ে হওয়াতেই তো ছোট মামী এলো। কি ভালো তার আচারের স্বাদ! আর নীতি আপু কি সুন্দর বউ সাজলো! তখন আমারও ইচ্ছে হলো এমন সুন্দর বউ সাজতে। আমার বান্ধবী অনুরতো তিন মাস হলো বিয়ে, কেমন খোঁপায় বেলীফুলের মালা গুঁজে বর নিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকলো বরকে ক্যাম্পাস দেখাতে। তখন আমিও ওর মতো নেকু নেকু করে বলতে চেয়েছি, ‘এই চাতালে বসে আমাদের একটা ছবি নাও না গো। না না সেল্ফি নয়, এই পৌষি তোর ভাইয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কাপল পিক তুলে দে না।’ কিন্তু বিয়ের যে এত্তো হ্যাপা কে জানতো? আমি তো উনাকে ফোনে বলেছিলাম সব যে, আমি বিয়ে করতে চাই না, উনি জানতে চেয়েছিলেন কারো সাথে প্রেম আছে কিনা? আমি কারণ বললাম ছবি তোলা, সাজুগুজু আর সুইজারল্যান্ড হানিমুনের জন্য এতো প্যারা পোষাবে না। এটা ও বললাম উনি যেনো বলেন, আমাকে উনার পছন্দ না, উনি রাজিও হলেন বললেন, ‘ঠিক আছে তুমি আমার কথা মতো চলো আমি সব ম্যানেজ করছি।’ তারপর বললেন ‘কালকে তো ডে অফ বাইরে এসো বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করবো, তোমার বা আমার বাসায় এই নিয়ে আলোচনাটা রিস্কি।’ আমি বললাম, বাসায় কি বলবো? উনি বললেন, ‘বলবে আমার সাথে বেড়াতে যাচ্ছো। তোমার বাসার লোকেরা তো এক্ষুনি জানে না যে আমরা বিয়ে করবো না, তাই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’

প্রস্তাব টা মন্দ নয়, উনার সাথে দেখা করবো শুনে দোলা আপু অনেক সময় নিয়ে তিন মন মেকাপ দিয়ে ন্যাচারাল লুকে(!) সাজিয়ে দিলো। দেখা হতেই উনি বললেন, ‘কি খাবে বলো?’ আমি বললাম, কিছু না। উনি জিজ্ঞেস করলেন ‘আইসক্রিমও না?’ ইশ! আমি তো আইসক্রিম খুব ভালবাসি, উনি কিভাবে জানলেন?  আইসক্রিম পার্লারে চকলেট, ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি সব ফ্লেভার টেস্ট করেছি, উনি শুধু স্ট্রবেরিটা নিলেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন ‘আর আইসক্রিম নয় ঠান্ডা লেগে যাবে, চলো।’ আমি অবাক হয়ে বললাম, আরে প্ল্যানই তো হলো না, যাবো কি? উনি বললেন ‘এইযে আইসক্রিম খেয়ে মাথা ঠান্ডা করলাম বুদ্ধি বের হবে এখন, আর সমস্যা যেহেতু তোমার তাই তোমাকে সামনে বসিয়ে কন্সান্ট্রেড করলাম।’

এভাবে প্রায় রোজই আমরা প্ল্যান করার জন্য বাইরে যেতাম, উনি মাথায় প্ল্যান করতেন আর আমাকে নিয়ে ঘোরাঘুরি শপিং আর বাইরে খেতেন। কিন্তু গায়ে হলুদের আগের দিন যখন বললাম, বিয়ে ক্যান্সেল করুন। উনি অবাক হয়ে বললেন, ‘আমাকে তোমার খারাপ লাগে না, বিয়ে ভাঙবো কেনো?’ আমি রেগে লাল, এতো বড় ধোকা! তুলকালাম বাঁধাকাম এই বলে যে, এই ছেলে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আত্মীয়দের মধ্যে ফিসফাস শুরু হয়ে গেলো, নিশ্চয়ই ছেলের কোন এফেয়ার ধরা পরেছে। কেউ আবার বললো ‘ঠিক মতো খোঁজ না নিয়ে বিয়ে দিলে এমনই হয়।’ কেউ আবার মুখ ভেঁঙচিয়ে বললো, ‘আমার আনা সম্বন্ধটা তো এর চেয়ে হাজার গুন ভালো ছিলো!’ শুরু হয়ে গেলো ছেলে পক্ষের সব খুঁত ধরা। ছেলের ভাবী কেন বউ সেজে এলো, তার তো বিয়ে না? ছেলের বাবার দাড়ি দেখতে অমন কেন? ছেলের মা কম হাসলো কেন? ছেলের বোন বেশি হেসেছে কেন? এমনকি তাদের বাড়িতে সাহায্যকারী মহিলা তাদের সামনে হাই তুললো কেন? এহেন দোষও পরিলক্ষিত হলো! (চলবে)

উপরে