NarayanganjToday

শিরোনাম

এরেঞ্জ ম্যারেজ (পর্ব-৪)

সামান্তা মিজান


এরেঞ্জ ম্যারেজ (পর্ব-৪)

নানা ধরনের লোকের নানান কথার মাঝে কানে এলো বাবার শরীর খুব খারাপ, মামণি কাঁদছে ডাক্তার আংকেল এসেছে। আত্মীয়-স্বজন কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে গেছে, কেউ আহারে উহুরে করে সময় কাটাচ্ছে, কেউ তার বাচ্চা সন্ধ্যায় দুধ- কনফ্লেক্স না খেলে কিভাবে হাহাকার করে তাই বলছে, কেউ কি সব গুজগুজ ফিসফিস করছে, পুরুষদের কেউ টিভিতে খেলা দেখছে, কেউ এই আসছি বলে বাইরে যাচ্ছে টিকিও দেখা যাচ্ছে না।

সকালে তত্ব আসার কথা দুপুর হয়ে গেছে ছেলের আর মেয়ের হলুদ একি দিনে কিন্তু দুটো বাড়িই যেনো মরা বাড়ি।কলিং বেল এর আওয়াজ অন্য সময় হলে উকি দিয়ে হলেও দেখতো, কিন্তু বাসায় এতো মানুষ! সারাদিনই আসা যাওয়া লেগেই আছে। তবু মনে হলো এমন কেউ এসেছে যাকে নিয়ে বাসায় ছোট খাট একটা জটলা বেঁধেছে। তবু ওঠার কোন ইচ্ছে নেই, কিন্তু নিলয় ভাইয়ার গলা, "পৌষ, পৌষ তুই কোথায়?” এটা অগ্রাহ্য করার উপায় নেই, নিলয় ভাইয়াকে কাজিনদের মধ্যে সবাই ভয় পায়। কিছুটা রাশভারী হলেও পৌষিকে খুব আদর করে।

পৌষির এই সমন্ধটি নিলয় ভাইয়া না আনলেও তন্ময়কে চিনে।পৌষি রুম থেকে বাইরে এসে দেখে নিলয় ভাইয়ার সাথে তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। সে তন্ময়কে উপেক্ষা করে নিলয়ের দিকে তাকালো।বাসায় আত্মীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ তন্ময়ের উপর খুব রাগ দেখাচ্ছে কেউ আবার হাজার হোক জামাই বলে বসানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু নিলয় ভাইয়ার গাম্ভীর্যের কাছে সব পানির মতো ভেসে গেলো।

ভাইয়া তন্ময়কে বাবার রুমে নিয়ে আহা উহু করতে থাকা আত্মীয়দের সেখান থেকে বের করে দিলো। আর পৌষির হাত ধরে তার রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। পৌষি ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। ভাইয়া কি তাকে বকবে? কিন্তু ভাইয়া তার শান্ত গলা আরো শান্ত করে পৌষির মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে ডাকলো,"পৌষ"। পৌষি প্রবল স্রোতস্বিনী ধারার মতো ভাইয়ের বুকের ভেতর আছড়ে পড়লো।

পৌষ.....  সেই ছোট্ট পৌষ...ছোট ছোট দুটি পা...ভাইয়া তুমি তোতায়? আমি তোমালকে থুজি (আমি তোমাকে খুঁজি)! একটু স্বল্পভাষী হওয়ার জন্য বাকি কাজিনরা বিশেষ করে ক্ষুদে গুলো একটু দূরেই থাকতো কিন্তু পৌষি এদের থেকে আলাদা। ভাইকে দেখলেই আস্তে করে ছোট্ট দুটো হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরতো, দাড়িয়ে থাকলে হাত বাড়িয়ে দিতো, "তোলে (কোলে)নাও"!

পৌষের বিয়ে! হ্যা বড় সে হয়েছে তবু মনের বয়স পাগলীটার একদম বাড়েনি।সেই ছোট্টটির মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে।তারপর আস্তে আস্তে ভাইয়াকে বলতে শুরু করলো কি হয়েছে।ভাইয়া সব শান্ত হয়ে শুনে তাকে ধীরে ধীরে বললো," পৌষ, তুই তোর ভাইয়াকে ভরসা করিস?" পৌষি ঘাড় কাত করে সায় দিলো।সে পৌষিকে রুমে বসিয়ে রেখে বাইরে এলো।তন্ময় ও বাবার রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। (চলবে)

উপরে