NarayanganjToday

শিরোনাম

এরেঞ্জ ম্যারেজ (পর্ব-৫)

সামান্তা মিজান


এরেঞ্জ ম্যারেজ (পর্ব-৫)

নিলয় ভাইয়া রীতিমতো যুদ্ধ করে বিয়ে টা দিলো, পৌষি ভাইয়ার কথা মেনে বিয়ে করলেও তার বেশ অবাক লাগলো যে এতো কিছু শোনার পরেও তাকে বিয়ে করতে বললো! বিয়ের দিন স্টেজ থেকে নেমে যখন তন্ময়দের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিলো তার মনে হচ্ছিলো একটা ঘোরে আছে, পুতুলের মতো যা করতে বলা হচ্ছিল তাই করছিলো। এমন সময় নিলয় ভাইয়া কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, "পৌষ, আমার ওপর রাগ করিস না। যা করেছি তোর কথা ভেবেই করেছি, তন্ময় ছেলেটা ভালো হয়তো ভুল করে ফেলেছে একটা। কিন্তু দেখিস কিছুদিন পরে তুই নিজেও এটা বুঝবি।”

অভিমানে পৌষির গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছিল না। সে কোন কথা না বলে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। তন্ময়ের ঘরে তাকে বসিয়ে যখন সবাই হৈচৈ করছিলো পৌষির এসব কথা মনে হতেই বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কেউ বোঝেনি তাকে কেউ না, তন্ময় তো বাইরের লোক ধোঁকা দিতেই পারে কিন্তু মামনী, বাবা, ফুপি, সব কাজিনরা এমনকি নিলয় ভাইয়াও না। কেউ ভালবাসে না তাকে, কেউ যখন ভালোই বাসে না ওখানে থাকুক বা অন্য কোথাও কি এসে যায়?

আস্তে আস্তে ভীড় কমছে তন্ময়ের রুম থেকে নানান ভঙ্গিতে ছবি তোলাও শেষ।সেই পুরনো ভয়টা ছেঁকে ধরেছে পৌষিকে তাকে তন্ময়ের রুমে সারারাত থাকতে হবে,শুধু একদিন নয় প্রতিদিন তার ওপর সব মানুষ নতুন। যদিও পৌষির সাথে তাকে সাহায্য করার জন্য বাসার সাহায্যকারীদের একজন এর মেয়ে এসেছে বয়স পনের/ষোল নাম লাভলী,আর এসেছে তিথি পৌষির কাজিন যে পৌষির থেকে একবছরের ছোট। ওদেরকে ঘুমানোর জায়গা দেখানোর পরে যারযার জায়গায় চলে গেছে।

তন্ময় কিছুক্ষণ ছবি তুলে বন্ধুদের সাথে বাইরে চলে গেলো। পৌষির দম আটকে আসছে, গা শিরশির করছে, মনে হচ্ছে সব ছেড়ে ফেলে একদৌড়ে নিজের বাসায় গিয়ে নিজের রুমে একটু আরাম করে ঘুমায়। তাকে বাসা থেকে বলে দেওয়া হয়েছে সকাল সাতটার এলার্ম দিয়ে রাখতে আটটার মধ্যে শাওয়ার নিয়ে চুল শুকিয়ে শাড়ি পড়ে যেনো রুম থেকে বেরোয়। কিন্তু এখন যা অবস্থা একজন অল্প পরিচিত মানুষের রুমে না সে ঠিক করে ঘুমাতে পারবে না জেগে থাকতে পারবে। নিজের ঘরে লাইট জ্বালিয়ে কফি মাগ হাতে বই পড়ার অভ্যাস তার আছে কিন্তু এটা তো আরেকজন এর সাথে শেয়ারিং রুম তার ওপর দোলাপু বা অন্য কোন কাজিন না একেবারে একজন ছেলে মানুষ। এসব ভাবতে ভাবতে তন্ময়ের একজন ভাবী রুমে ঢুকলো ঢাকা দেওয়া ট্রে হাতে নিয়ে এসেই বললো, "একি! তুমি ফ্রেশ হওনি এখনো?  আর ওই বদমাইশটাই বা কোথায়? সারা বছর  বন্ধু–বান্ধব নিয়ে হৈহৈ তো করেই এখন নতুন বউ রেখে বন্ধুদের সাথে ফুসুরফাসুর যায় নি?"

পৌষি ঢোক গিলে অতি আগ্রহে বললো, "থাক না থাক, সব বন্ধুরা এসেছে, উনি থাকুক উনাদের কাছে।" ভাবী বিরক্ত হয়ে বললেন, "থাকবে, বিয়ের দিন? তুমি ফ্রেশ হও, আমি ওর ওখানে থাকা বার করছি।"

পৌষি হতাশ হয়ে মনে মনে ভাবছে, "কে এমন গায়ে পরে সাহায্য করতে বললো বাপু? সে দিব্যি ভেবে রেখেছিল যে তন্ময়ের দেরি করার অযুহাতে সে ডোর লক করে ঘুম দিবে। সকালের আগে খুলবে না, তারপর কাল বৌভাত এর অনুষ্ঠানের পরে সে তো তার নিজের বাড়ি যাবে। তখন কিছু একটা ভেবে নেওয়া যাবে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে গিয়ে মহিলা তাকে বিপদে ফেলে দিয়ে গেলো। ফ্রেশ হওয়ার জন্য যেইনা ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে অমনি রুম অন্ধকার হয়ে গেলো ঠিক তখনই মনে হলো রুমে কেউ ঢুকেছে আর তার দিকে হাত বাড়িয়েছে তাকে ধরার জন্য। অমনি সে ভয়ার্ত গলায়  "কে?" বলেই  চিৎকার দিতে গেলো আর মনে হলো তার  মুখটা কেউ চেপে ধরেছে। (চলবে)

উপরে