যথাসময়ে বাজারে ছেলেটির সাথে দেখা হোল জাহিদদের। ছেলেটি যা বলল তাতে করে তারা টেনশানে পরে গেলো। ছেলেটির ভাষ্য মতে, ‘সেদিন সেলিম আর রফিকএকটা ছেলেকে অনেক মেরে তার সাথে থাকা একটি মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। মুলত সেলিম আর রফিক হোল মেয়েদের দালাল। এই এলাকায় তারা ত্রাস, সবাই কম বেশি তাদের ভয় পায়। তারা বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের ফুসলিয়ে, মিথ্যা বলে, জোর করে ধরে নিয়ে যায়। কখনো অন্য কারো কাছ থেকে কিনেও নেয়। তারপর সেইসব মেয়েদের নিয়ে যায় টাঙ্গাইলের একটা বেশ্যাখানায়। বেশ্যালয়টা চালায় একজন মহিলা। অনেকেই এসব জানলেও ওদের সবাই ভয় পায়। কারণ ওদের সাপোর্ট করে স্থানীয় নেতারা এবং প্রশাসন’। রিপন এবং শামিম দুজনেই বেশ অবাক হয়েছে এসব শুনে। রিপন জিগ্যেস করল, ‘আমরাও তো পার্টি করি তাহলে আমরা ওদের চিনিনা কেন? আর তুমিও বা এতো কথা কিভাবে জানো’? ছেলেটি বলল, ‘ভাই আপনারা পার্টি করলেও মনে হয় এলাকায় থাকেন না। থাকলে আমাকে এই কথা বলতেন না। তাছাড়া পার্টি করলেও কি নেতার সব সঙ্গীসাথীদের সবাই চেনে? আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনারা আরও খোঁজ-খবর নিতে পারেন। তবে আমার সাথে কথা হয়েছে এই কথা কাউকে বলবেন না। আমি এতো কথা জানি কারণ আমার হোটেলের মালিক ও এই কাজের সাথে জড়িত আছে, আর আমি এই হোটেলে কাজ করি আজ প্রায় চার বছর। তাই অনেক কিছুই নিজের চোখে দেখেও দেখিনি’। ছেলেটাকে আরও একশ টাকা দিয়ে বিদায় করে তিন বন্ধু নিজেদের মধ্যে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেলো।
পরদিন সকালে রিপন আর জাহিদ টাঙ্গাইল রওনা দিলো। আর এদিকে শামিম রয়ে গেলো, এলাকায় পরিচিত সবার কাছ থেকে আর কোন তথ্য সংগ্রহ করতে যা তাদের কাজে লাগতে পারে। যাতে কোন ভাবে যদি জাহিদের উপকার হয়! টাঙাইল পৌঁছে রিপন আর জাহিদ প্রথমে খোঁজ নেয়া শুরু করলো কোথায় কোথায় নারী নিয়ে ব্যবসা চালু আছে সেসব এলাকার ঠিকানা। মোটামুটি তিনটা জায়গার নাম পেলো যেখানে মেয়েদের নিয়ে জমজমাট ব্যবসা চালু আছে। এরি মাঝে শামিম ফোন করে জানালো যে, সেলিম আর রফিক যেই মহিলার জন্য কাজ করে সেই মহিলার নাম মরিয়ম বেগম। মরিয়ম বেগম নাকি বাম হাতের মুঠোয় প্রশাসন চালায়। অনেক হর্তা-কর্তা ব্যক্তিই তার নিয়মিত গ্রাহক। বেশ অনেক বছর ধরেই এই মহিলা দাপটের সাথে নারী ব্যবসা করে যাচ্ছে। তার নামের সাথে অনেক খুন-খারাবির কথাও জড়িয়ে আছে। তাকে সহজে কেউ ঘাটায় না। মহিলা মারাত্মক বদ-মেজাজি, ভয়ংকর হিংস্র এবং জঘন্য চরিত্রের অধিকারী যে নাকি দয়া-মায়া নামক শব্দের সাথে পরিচিত নয়। এতো সব নেগেটিভ কথা শুনে জাহিদের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। ভাবনায় পড়ে গেল, নিরুকে কি আসলেই খুঁজে পাবে সে? নিরু যদি এই মহিলার কব্জায় থাকে তাহলে কিভাবে নিরুকে উদ্ধার করবে জাহিদ? জাহিদের চোখে আবার পানি এসে গেল, কিছুতেই কান্না চেপে রাখতে পারল না। রিপন জাহিদের কাঁধে হাত রাখল, বলল ‘সাথে আছি চিন্তা করিস না’। রিপনের কথা শুনে জাহিদ আরও আকুল হয়ে কাঁদতে লাগল।
দুপুরে খেয়েই দুইবন্ধু রওনা দিল মরিয়ম বেগমের আস্তানা খুঁজে বের করতে। কি করবে বা পরিস্থিতিভেদে কি করতে হবে তারা যেতে যেতেই বিস্তারিত আলোচনা করে নিল। বিপদ দেখলে রিপন ফিরে আসবে এটাই ঠিক হোল, যদিও রিপন এটা মানতে প্রস্তুত ছিলনা। এরমাঝে শামিম আর একজন মানুষের ফোন নাম্বার দিল তাদের, যদি খুব বিপদে পড়ে তাহলে যেন তার কাছে সাহায্য চায় তাই। আর ঠিকানা মোটামুটি জানিয়ে দিল তাদের কোথায় যেতে হবে। ঠিকানা পেয়ে তাদের কাজ কিছুটা কমে গেল। তারা অবশেষে ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে গেলো। আগেই ঠিক করা ছিল রিপন যেরকমই হোক ভেতরে যাবেনা, ভেতরে যাবে কেবল জাহিদ। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে জাহিদ যদি ফোন না করে কিংবা বের হয়ে না আসে তাহলে রিপন সাহায্যের জন্য শামিমের দেয়া নাম্বারে ফোন দিবে। রিপন বলে উঠল, ‘চিন্তা করিস না, পেয়ে যাবি নিরুকে। আমি এদিকেই অপেক্ষায় থাকবো। না পেলেও কোন ভেজালে জড়াবি না। চুপচাপ বের হয়ে আসবি। দরকার পরলে আবার কাল যাবি খুঁজতে। কোন ভুল হলে নিরুরই ক্ষতি হবে’। মাথা নাড়ল জাহিদ। অতঃপর দু’বন্ধু নিজেদের বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে বিচ্ছিন্ন হোল। জাহিদ সামনে পা বাড়াতেই রিপন আকাশের দিকে তাকাল, হয়তো সৃষ্টিকর্তার কাছে সব ঠিক হয়ে যাবার প্রার্থণা করল। সামনে তাকিয়ে দেখল, জাহিদ ধীরে ধীরে ভেরতে ঢুকে গেলো। (চলবে)
আপনার মতামত লিখুন :