বিষয়:
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮, ১১:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮, ০৯:০৭ পিএম
নারায়ণগঞ্জ টুডে
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮, ০৯:০৭ পিএম
নারায়ণগঞ্জ টুডে
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠানে বিএনপিপন্থী আইনজীবিরা কেউ উপস্থিত হননি। আর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন সাংসদ শামীম ওসমান। তার ধারণা, এই অনুষ্ঠানে বিএনপিপন্থী আইনজীবিদের না আসার কারণ, তারা শুকরানা মোনাজাত ধরতে গিয়েছেন। অনেকদিন পর তারা বদরুজদ্দোজা চৌধুরীর কল্যাণে আশার আলো দেখতে পারছেন। আর এ কারণেই শুকরানা নামাজ, মোনাজাত ধরতে গেছেন।
রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরি কমিটির অভিষেক ও নতুন ডিজিটাল বার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যকালে ওই সমালোচনা করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী অ্যাড. আনিসুল হক।
শামীম ওসমান বলেন, “কেউ বাংলাদেশের মর্যাদা নিয়ে ভারত প্রীতির কথা বলেন আবার গিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন। টকশোতে বলছেন ভারত বিরোধী কথা! আবার ভারতে গিয়ে করছেন কবিতা আবৃত্তি ‘দাদা গো দাদা, তুমি কল্প তরু আমরা তোমার কেনা গরু, তুমি যদি দাও একটু ঘুষি তাতেই আমরা খুশি। এই রাজনীতি যারা করে তাদের উদ্দেশ্যে বলি, আমি বসে বসে ভাবছিলাম বিএনপির ভাইয়েরা কেন আসছিলেন না!”
আইনজীবিদের অভিষেক অনুষ্ঠানে বিএনপি পন্থীদের না আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় আজকে তারা সবাই শুকরানা মোনাজাত করতে গেছেন। কেন গেছেন? কারণ, এই ভ-, ছনবিচ্ছিন্ন বিএনপি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ তে এদেশের মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে জনবিচ্ছিন্ন হয়েছেন তারা আজ অনেকদিন পরে একটু আশার আলো দেখেন। কেন? কারণ, তাদেরই এক সময়ের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপর থেকে হাত বাড়িয়েছেন তারা সেই হাত ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করছেন। আমি শুকরানা নামাজ পড়তে বলি উনাদের। মোনাজাত করেন। আল্লাহ কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে বি চৌধুরী সাহেব উনাদের দিকে হাত বাড়িয়েছেন।”
শামীম ওসমান বলেন, “যদি সেদিন আপনারা এই মহামান্য এক্স রাষ্ট্রপতিকে রেললাইনের উপরে যেভাবে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মারার চেষ্টা করেছিলেন। এই বৃদ্ধ ভদ্রলোক, আমার শ্রদ্ধেয় মুরুব্বি, আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেব দৌঁড়ে দৌঁড়ে রেললাইন দিয়ে পালিয়ে পালিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি মোটর সাইকেলে ওঠে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। আল্লাহ মাফ করুক। সেদিন যদি তিনি মারা যেতেন। তাহলে কে এসে আপনাদের হাত বাড়িয়ে দিতো? কে এসে আপনাদের একটু আশার আলো দেখাতো? আমি মনে করি, আপনাদের শুকরানা করা উচিত।”
শামীম ওসমান ব্যাঙ্গ করে বলেন, “যদি হাতটা বাড়ানোর পরে উচ্চতা ১০ তলা পর্যন্ত হয় আর ৩ তলা পর্যন্ত ওঠানোর পরে আমাদের শ্রদ্ধেয় বি চৌধুরী সাহেবের যদি মনে পড়ে যায়, আরে বেটা, তোরাই তো সেই তারেক রহমানের দল, যারা আমাকে পিটিয়ে পিটিয়ে মারতে চেষ্টাই করো নাই, আমার বাড়িতে রাতের বেলায় গান পাউডার দিয়ে আগুন দিয়ে দিয়েছিলে। তখন যদি হাত ছেড়ে দেয়, আমার মনে হয় আপনাদের মাজা এমনিতেই ভাঙা আর ওই ভাঙা মাজা আর সোজা হবে না। তাই বেশি বেশি করে নামাজ পড়েন। কারণ, ষড়যন্ত্র যখন করতে চাচ্ছেন আপনারা, করেন। আমরা জানি সামনে অনেক খেলা হবে। নরপশুরা, ঘাতকরা থাবা দিবে বাংলাদেশের মানচিত্রে।”
তিনি বলেন, “এই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ তৈরি হয়ে বায়তুল আমানে বসে। আপনি (আনিসুল হক) জানেন, এখানেই প্রথম সংবিধানের খসড়া লেখা হয়েছিলো। স্বাধীনতার সনদ লেখা হয়েছিলো এখানেই নারায়ণগঞ্জে আমার দাদার বাসায় বসে। আমরা এই নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। আমরা গোলাম আযমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে, যার কারণে আমরা এখানে (চাষাড়া) ২০ জন মানুষকে হারিয়েছিলাম, বোম ব্লাস্ট করা হয়েছিলো। আমরা সেদিন শুয়েছিলাম রক্তের উপরে। যখন জ্ঞান ফিরে দেখছি যে আমরা রক্তের ওপরে শুয়ে আছি।”
শামীম ওসমান হুঙ্কার ছেড়ে বলেন, “সেই রক্তের নামে শপথ করে বলতে চাই। যারা খেলতে চেষ্টা করছেন, স্বপ্ন দেখছেন আবার আকাম করবেন। তাদের বলতে চাই, আন্দোলন করেন, কোনো আপত্তি নাই। জনগণকে সম্পৃক্ত করেন, কোনো আপত্তি নাই। নির্বাচনে আসেন, ভোটে আসেন ক্ষমতায় আসেন কোনো আপত্তি নাই। তবে, যদি কেউ মনে করেন, ২০১৪ পনেরর মতো মানুষের উপর আবার আগুন দিবেন, গান পাউডার দিবেন, কোনো সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে মোহাম্মদপুরে বসে গোপন বৈঠক করে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাবেন, আপনাদেরকে নারায়ণগঞ্জের মানুষ, ঢাকার মানুষের দরকার নাই, নারায়ণগঞ্জের লাখো মানুষকে নিয়ে, জনগণকে নিয়ে শেখ হাসিনার সমর্থক যারা, জনগণ যারা, সাধারণ মানুষ যারা স্বপ্ন দেখছে যে বাংলাদেশ এখন কারো পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ায় নাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে বাংলাদেশ আজকে উঁচু গলায় বলতে পারে, ‘আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছি, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের কাছে মাথানত করার জন্য আমরা দাঁড়াই নাই’ তাদের নিয়ে রুখে দাঁড়াবো।”
যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছেন জানিয়ে শামীম ওসমান প্রশ্ন রেখে বলেন, “বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে বিশে যদি কেউ ষড়যন্ত্র করে, বাংলাদেশের উন্নয়ণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কি রাষ্ট্রদ্রোহি মামলা হওয়া উচিত না? যদি হওয়া উচিত হয়, বিদেশের পত্রপত্রিকায় দেখি, বাংলাদেশে যারা নোবেল টোবেল পুরস্কার পান, তারা যখন হিলারি ক্লিনটনের সাথে আলাপ আলোচনা করে, বাংলাদেশকে চোর সাবস্ত করে, পদ্মা সেতু বন্ধ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন? আমি আজকে আপনার (আনিসুল হক) কাছে, এই আইনজীবিদের কাছে এবং দ্বিতীয় পার্লামেন্ট সেই সাংবাদিক ভাইদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, সেই তাদের বিচার হয় না কেন?”
তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করবেন, ইনশাল্লাহ আল্লাহর হুকুম হলে জনগণের সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছেন, আগামীতেও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আপনারা প্রস্তুত থাকবেন ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।”
সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলের সভাপতিত্ব ও সেক্রেটারি মোহসীন মিয়ার সঞ্চালনায় ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাখেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. হোসনে আরা বেগম বাবলী, জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমান, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালহে শেখ মুহাম্মদ জহিরুল হক, যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-১) বিকাশ কুমার সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান প্রমূখ।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮/এসপি/এনটি
আপনার মতামত লিখুন :