NarayanganjToday

শিরোনাম

আমার মেয়েটাকে বড্ড হিংসা হয়


আমার মেয়েটাকে বড্ড হিংসা হয়

সেই সন্ধ্যে থেকে মেয়েটা বসে বসে নিজ হাতে কার্ড বানাচ্ছে। গিফট বক্স র‍্যাপ করছে। সুপার শপে গিয়ে বাবার পছন্দের ফ্রুটস কিনে এনেছে। নিজে নিজে ফ্রুটস সালাদ বানিয়ে রেখেছে। ব্ল্যাকফরেস্ট কেক এনে ফ্রিজে লুকিয়ে রেখেছে ওর বাবাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে!

আমার মেয়েটির জন্ম হয় আজ থেকে দশ বছর আগে ওয়ার্ল্ড ফাদারস ডের ঠিক আগের সন্ধ্যায়। দু দুবার পিঠের শিরদাঁড়ায় নেয়া এপিডুরালের কবলে তখনো আমার সারা শরীর। কোনমতে শুধু চোখ খুলে দেখি, ছোট্ট একটা পুঁটলি বুকের কাছে ধরে সদ্য বাবাটা লজ্জা লজ্জা গলায় আমাকে বলছে, ‘আজ থেকে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য আর কিছু চাওয়ার নাই।’

সত্যি সত্যি সেদিনের পর থেকে নিজের জন্য আর কিছু চাওয়ার ছিল না সৃষ্টিকর্তার কাছে! যা কিছু চাওয়া শুধুই মেয়েটার জন্য! মেয়েটা একটু একটু করে বড় হচ্ছিল, আর বাবাটা প্রতিটা মুহূর্তে নিজের বাবাত্বকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছিল! আমি তাকিয়ে তাকিয়ে শুধুই দেখতাম!

বিদেশ বিভুয়্যে যারা থাকেন জানেন, একটা বাচ্চা দুজন মিলেই সামলাতে হয়। রাত জেগে দুধ খাওয়ানোর আর ন্যাপি বদলানোর দায়িত্বটা বাবাই নিয়ে নেয়। আমার ঘাড়ে থাকে সারা দিনের। এছাড়াও কলিক পেইনে চিৎকার করে বাচ্চাটা যখন কাঁদত, ভ্যাক্সিনের ব্যথায় জ্বরের সময়ে বা ধীরে ধীরে বড় হতে হতে কন্সটিপেশনের কারণে চিৎকারের সময়ে বাবাই ছিল মেয়েটার অদ্ভুত সব সাহসের আশ্রয়!

আমি অবাক হয়ে হয়ে দশ বছর ধরে দেখছি, কি অদ্ভুত ভাবে একজন বাবার জন্ম হয়! কি অদ্ভুত ভাবে একজন মনভোলা, কাজপাগল মানুষ কি অদ্ভুত স্বার্থপর পিতা হয়ে যায়! এতোটাই স্বার্থপর যে, নিজের অসুখের সময়েও জোর করে ওষুধ খায় শুধুমাত্র মেয়ের কথা ভেবে! মেয়ের জন্য বাঁচতে চায়, মেয়ের জন্য সুস্থ থাকতে চায়।

মেয়েটা প্রতিদিন একটু একটু করে বড় হচ্ছিল আর আমি শুধুমাত্র একজন দর্শক হয়ে একবুক হিংসে নিয়ে তাদের সম্পর্কের দৃশ্যগুলো উপভোগ করছিলাম ...!

ভাতের টেবিলে বসে মেয়ে যখন তাঁর বাবার পাতে হাত ডুবিয়ে দিত, আমারো ইচছা করত আমার বাবার পাতে হাত ডুবিয়ে ভাত খেতে। আমার মেয়ের দেখাদেখি আমারো ইচ্ছে করত ভীষণ, নিজের ছোট্ট একটা কাপ নিয়ে বাবার চা থেকে ভাগ বসাতে! ইচ্ছে করত, বাবার পেটের উপর আরাম করে বসে রঙপেন্সিল দিয়ে বাবার চোখ মুখ আর ঠোঁটে ইচ্ছেমতন আঁকিবুঁকি করতে। ইচ্ছে করত বাবার গলা জড়িয়ে কানে কানে রাতেরবেলা আইসললির আবদার করতে...! কারণে অকারণে চুমু খেয়ে বাবাকে বলতে, i love you daddy....you are my super hero...i love you million and million times!

আমারো ভীষণ ইচছে করে বাবাকে একটু শুধু ছুঁয়ে দেখতে........! কিন্তু সেটা আর কোনদিনও সম্ভব নয়। বাবারা একবার হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না।

যাদের বাবারা কাছে কিংবা দূরে আছে, কোন কারণ ছাড়াই আজকে অন্তত একবার বলেই দেখুন ‘বাবা তুমিই আমার নায়ক!’ একবার অন্তত ছুঁয়ে দেখতে পারেন কোন কারণ ছাড়া। ভালবাসতে কোন কারণ লাগেনা। ভালবাসতে বিশেষ কোন দিন লাগেনা। কখনোই না। পৃথিবীর সব বাবাদের আজকের এই দিনে প্রাণঢালা ভালবাসা।

উপরে