NarayanganjToday

শিরোনাম

সেলিম ওসমানের বক্তব্য রাজনৈতিক ‘শিষ্টাচার বহির্ভূত’!


সেলিম ওসমানের বক্তব্য রাজনৈতিক ‘শিষ্টাচার বহির্ভূত’!

লাঙ্গল বিরোধী জনমত তৈরি নারায়ণগঞ্জে বেশ প্রকট হয়েছে বেশ কিছুদিন আগের থেকেই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মীই নারায়ণগঞ্জে লাঙ্গলকে কোনো ছাড় না দেয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। এরমধ্যে অনেকেই বলেছেন, ‘লাঙ্গলের ভার আর বইতে পারছি না’।

এদিকে এর পাল্টা জবাবে এতদিন কোনো কথা না বললেও এবার মুখ খুলেছেন সেলিম ওসমান। তিনি রোববার (১০ জুন) নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে জাতীয় পার্টির মতবিনিময় সভায় প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘লাঙ্গলের ভার সইতে পারেন না কেন গো ভাই?’ তবে এই কথাটা সাংসদ সেলিম ওসমান ঠিক কাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন সে নাম উল্লেখ না করলেও ‘একটি দলের সাধারণ সম্পাদক’কে যে বলেছেন সেটি বক্তব্যের মধ্যেই পাওয়া যায়।

তবে প্রশ্ন ওঠেছে, সেই সাধারণ সম্পাদক কে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল নাকি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা?

সেলিম ওসমান তাঁর এই বক্তব্যে অ্যাড. খোকন সাহাকে ইংগিত করেছেন বলেই মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। যা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে তাঁর বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘লাঙ্গলের ভার আরো হবে। পাপ মোচন করতে হলে সনাতন ধর্মের মানুষকে লাঙ্গলবন্দে গিয়ে ¯œান করতে হয়। আপনি তো করেন না।’

এছাড়াও সেলিম ওসমান তাঁর বক্তব্যের একটি অংশে বলেছিলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে যাঁরা সরকারি দলের লোক বলে দাবি করেন তাঁরা বোকার হদ্দ।’ সাংসদ সেলিম ওসমানের এমন বক্তব্যে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সাংসদ রাজনৈতিক ‘শিষ্টাচার বহির্ভূত’ বক্তব্য দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন অনেকে।

এদিকে সেলিম ওসমানের বক্তব্যটি মোটেও ঠিক হয়নি বলে দাবি করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। তিনি বলেন, “সেলিম ওসমান সাহেবও তো সরকারে একটা অংশ, তাহলে তিনি এ কথা বলে কাকে কি বুঝাতে চাচ্ছেন।”

এছাড়াও ‘লাঙ্গলের ভার তো বইতে পারে না বলদে, আপনি তো একটি দলের সাধারণ সম্পাদক’ সাংসদের এমন বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলেই তিনি মনে করেন। আব্দুল হাই বলেন, “বক্তব্য দেয়ার সময় একজন আরেক জনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, সম্মান দেখাতে হবে। এমন কোনো বক্তব্য আমাদের দেয়া উচিত নয় যা তিক্ততা বাড়াবে।”

অপরদিকে সাংসদ সেলিম ওসমানের বক্তব্যকে সৃষ্টাচার বহির্ভূত বলেই দাবি করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগ করি। নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার দিন পর্যন্ত দাবি করে যাবো। এটা আমাদের দাবি। কারণ আমরা জাতীয় পার্টি করি না। বিএনপিও করি না। তাহলে নৌকা দাবি করলে সমস্যাটা কি?”

এছাড়া তিনি বলেন, “সরকারি দলের লোক বোকার হদ্দ কি করে হয়, নৌকার পক্ষে দাবি করলেই কি বোকার হদ্দ? মহাজোট যদি থাকে আর তাঁর পক্ষেই যদি আমাদের নেত্রী পুনরায় কাজ করতে বলে তাহলে আমরা করবো। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে মনে হয় সরকারি দলের লোকদের ভোট তাঁর দরকার নেই। জাতীয় পার্টির ভোট হলেই হয়ে যাবে।”

এদিকে এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা সাংসদ সেলিম ওসমানের অমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, “মাননীয় সংসদ সদস্য যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন তা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

প্রসঙ্গত, রোববার ১০ জুন বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের শীতলক্ষ্যা কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত এমপি সেলিম ওসমানের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে মতবিনিময় ও দোয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

তিনি বলেন, ‘একটি দলের সাধারণ সম্পাদক তো বলেই ফেলেছেন লাঙ্গলের ভার আর সইতে পারছি না। আরে ভাই লাঙ্গলের ভার তো সইতে পারেনা বলদে। আপনি একটা দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে লাঙ্গলের ভারে বাচঁতে পারেন না কেন গো ভাই?’

এছাড়াও সেলিম ওসমান তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘লাঙ্গলের ভার আরো হবে। পাপ মোচন করতে হলে সনাতন ধর্মের মানুষকে লাঙ্গলবন্দে গিয়ে ¯œান করতে হয়। আপনি তো করেন না। কিন্তু এই লাঙ্গলবন্দের জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ-৫ এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ ব্রহ্মপুত্র নদের এপার এবং ওপার দুটি আসনেই লাঙ্গল মার্কা দিয়েছেন। ইনশাল্লাহ আগামীতেও লাঙ্গল মার্কাই দিবেন। মনে অহংকার রাখবেন না। প্রতিটি মুহুর্ত চিন্তা করবেন মানুষের জন্য কাজ করবো মানুষের উপকার করবো।’

মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন এর সঞ্চালনা ও জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের এর সভাপতিত্বে  মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক আফজাল হোসেন, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, মহানগর শ্রমিক পার্টির আহবায়ক আবুল খায়ের ভূইয়া, জেলা সেচ্ছাসেবক পার্টির আহবায়ক কুতুবউদ্দিন, জেলা মহিলা পার্টির সভাপতি আঞ্জুমান আরা ভূইয়া, জেলা যুব সংহতির আহবায়ক রাজা হোসেন রাজু প্রমূখ।

১১ জুন, ২০১৮/এসপি/এনটি 

উপরে