NarayanganjToday

শিরোনাম

উজ্জীবিত বিএনপিকে পিছনে টেনে ধরার চেষ্টা!


উজ্জীবিত বিএনপিকে পিছনে টেনে ধরার চেষ্টা!

শুরুতে কিছুটা বিভক্তি থাকলে তা বর্তমানে উবে গিয়ে একাট্টা হতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। দলটির নতুন আহবায়ক ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশ উজ্জীবিত জেলা বিএনপি- এমন দাবি দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।

তবে, গুটি কয়েক মানুষ জেলা বিএনপি’র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। যা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটা কর্মসূচিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে, যারা জেলা বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উজ্জীবিত, প্রাণচঞ্চল জেলা বিএনপিকে পিছনে টেনে ধরার চেষ্টা করছেন, তারা মূলত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। এদেরকে ক্ষমতাসীন দলের ‘দালাল’ হিসেবই আখ্যায়িত করছেন তৃণমূল।

জানা গেছে, পূর্বের আহŸায়ক কমিটির ব্যর্থতার কারণে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর নতুন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির আহŸায়ক করা হয় নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে দক্ষ সাংগঠনিক হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে এবং সদস্য সচিব করা হয় জেলা যুবদলের সফল সভাপতি গোলাম ফারুক খোকনকে। নয় সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির ১নং যুগ্ম আহŸায়ক করা হয় সাবেক কমিটির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে। এছাড়াও যুগ্ম আহŸায়ক করা হয়েছে, আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহŸায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, শহিদুল ইসলাম টিটু, মাশুকুল ইসলাম রাজীব, লূৎফর রহমান খোকা, মোশারফ হোসেন ও জুয়েল হোসেনকে।

এদিকে সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনকে আহবায়ক করে জেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করায় নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই কমিটি জোড়ালো পদক্ষেপ রাখবে বলেও আশা করছেন তারা। তবে, এই কমিটিকে দুর্বল করার লক্ষ্যে দলেরই একটা পক্ষ পেছন থেকে নানাভাবে কলকাঠি নাড়ছেন বলেও জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কমিটি গঠনের পর সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন মান-অভিমাণ ভুলে কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক মামুন মাহমুদকে একাধিকবার ফোনও করেছিলেন। তবে, তিনি তার ফোন কল রিসিভ করেননি এবং পরে তার সঙ্গে আরও কোনো যোগাযোগও করেনি। একইভাবে ফতুল্লা থানা বিএনপির আহŸায়ক জাহিদ হাসান রোজেলকেও মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ফোন করেছিলেন। কথাও বলেছিলেন। এক সঙ্গে কমিটিটাকে সুন্দর, শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার সহযোগিতাও চেয়েছিলেন তিনি। তবে ফোনে এক কাতারে এসে কাজ করার কথা দিলেও বাস্তবে জাহিদ হাসান রোজেল জেলা বিএনপির বিপরীতে গিয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, নতুন এই কমিটির আহŸায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সবাইকে নিয়েই একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে তার বিরুদ্ধে থাকা ব্যক্তিদের সাথেও যোগাযোগ করেছেন। তার এই আহŸানে ইতোমধ্যে প্রায় সকলেই সাড়াও দিয়েছেন। এরমধ্যে আড়াইহাজারের পৃথক তিনটি গ্রæপকে তিনি জেলা বিএনপির ব্যানারে আনতে পেরেছেন। সোনারগাঁয়ের আজহারুল ইসলাম মান্নানও দূরত্ব ঘুচিয়ে জেলা বিএনপির ব্যানারে এসে কর্মসূচি পালন করছেন। বিএনপির সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ এখনও স্বশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও তার অনুগামি নেতাকর্মীদেরকে তার ছবি সম্বলিত ব্যানারসহ পাঠাচ্ছেন। এছাড়াও একই অঞ্চলের সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও মাহমুদুর রহমান সুমন বলয়কেও জেলা বিএনপির ব্যানারে বেশ সরব দেখা যাচ্ছে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, শাহ আলম, মামুন মাহমুদ এবং জাহিদ হাসান রোজেল জেলা বিএনপির বিপরীতে গিয়ে আলাদা বলয় সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের এই আচরণ তারেক রহমানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

আগের যেকোনো সময়ের থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি বেশি উজ্জীবিত মন্তব্য করে কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, ‘তারেক রহমান এই কমিটি দিয়েছেন। সুতরাং এই কমিটি সবাইকে মেনে নিতেই হবে। যদি কেউ এই কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে অবশ্যই তিনি তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিলেন।’

তিনি বলেন, ‘এই কমিটি ঘোষণার পর কমিটি নিয়ে কাজ করার কোনো সুযোগ হয়নি। দশ ডিসেম্বর, ১৩ ডিসেম্বর এবং ষোল ডিসেম্বরের কর্মসূচি পালন নিয়েই ব্যস্ততা ছিল। এছাড়াও কমিটি ঘোষণার পর বেশ কটি মামলা হলো। সব মিলিয়ে কমিটির কার্যক্রম বা পরামর্শ করার মত সময়, সুযোগ হয়ে উঠেনি। ফলে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ার বিষয় এষনও সৃষ্টি হয়নি। তাহলে আলাদা করে যারা কর্মসূচি পালন করছে তারা কেন করছে? তাহলেতো বলতেই হয় তাদের উদ্দেশ্য শুভ নয়। কেননা, তারা তারেক রহমানের দেয়া কমিটির বিপক্ষে গিয়ে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।’

রাজীব বলেন, ‘আমাদের আহŸায়ক অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি কমিটি পাওয়ার পর সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন। তিনি সবাইকে নিয়েই একটি পরিবার গড়ে তুলতে চাচ্ছেন। এক নং যুগ্ম আহŸায়ককে ফোনও করেছিলেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির আহŸায়ককেও ফোন করেছিলেন। কিন্তু তারা সেভাবে রেসপন্স করেননি। এটা ভালো লক্ষণ নয়। আমি বলবো, তাদের যেন শুভবুদ্ধিও উদয় হয়।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল হাই রাজু বলেন, ‘তারেক রহমান সাহেব যে কমিটি ঘোষণা করেছেন তা নিঃসন্দেহে একটি সুন্দর কমিটি হয়েছে। যদিও কমিটির আকার ছোট। হয়তো কারো মনে কষ্ট থাকতে পারে কমিটিতে স্থান পায়নি বলে। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন সাহেব একজন দক্ষ সংগঠক। তার হাতে কমিটি তুলে দিয়ে তারেক রহমান সুন্দর একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশংসার দাবি রাখে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কমিটির বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তারা ঠিক করেননি। এটি তারেক রহমানের সিদ্ধান্তকেই অমান্য করা হয়েছে।’

উপরে