বিষয়:
প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০১৮, ০৯:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০১৮, ০১:৪৫ এএম
নারায়ণগঞ্জ টুডে
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০১৮, ০১:৪৫ এএম
নারায়ণগঞ্জ টুডে
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান বিরোধী সংখ্যাটা দিনি বেড়েই চলেছে। একসময় যাঁরাই ছিলেন এই সাংসদকে ঘিরে আজ তাঁদের অনেকের সাথে সৃষ্টি হয়েছে তাঁর দূরত্ব। কেউ কেউ এখনও কাছে থাকলেও তাঁদের অনেকেই আবার শামীম বিরোধী শিবিরের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরই সাংসদ শামীম ওসমানের শক্তিশালী একটা বিরোধী পক্ষ ছিলো বহুদিন ধরেই। যা শহর ও শহরতলীবাসীর কাছেও স্পষ্ট। তা বর্তমানে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই মত প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এদিকে শহরকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ধারার নেতৃত্বে চলছে অনেকদিন ধরেই। এর একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অপরটির নেতৃত্বে রয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমান।
এই দুই বলয়ের মধ্যে প্রায় সময় নানা দ্বন্দ্ব, বিষোদগার প্রকাশ করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি ইতোপূর্বে প্রত্যক্ষ করেছে নারায়ণগঞ্জবাসী। সর্বশেষ এই দুই শিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও প্রত্যক্ষ করেছে মানুষ। সংঘর্ষে শামীম ওসমান সমর্থকদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছিলেন মেয়র আইভী।
আইভী শিবিরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুল কাদির, আরজু রহমান ভূঁইয়া, আবু সুফিয়ান, কামরুল ইসলাম মুন্না প্রমূখ ছিলেন। এরমধ্যে আনোয়ার হোসেন ও কামরুল ইসলাম মুন্না বলয় পরিবর্তন করে শামীম ওসমান বলয়ে যুক্ত হন।
অপরদিকে শামীম ওসমান বলয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, অ্যাড. আনিসুর রহমান দিপু, মহানগ আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক শাহ নিজাম, অ্যাড. মাহমুদা মালা, জাকিরুল আলম হেলাল, শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু প্রমূখ ছিলেন।
এই বলয় থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহ, অ্যাড. আনিসুর রহমান দিপু, অ্যাড. মাহমুদা মালা বের হয়ে গেছেন। যদিও তাঁরা প্রকাশ্যে আইভী বলয়ে ভিড়েন নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে এই বলয়ের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলছেন এই পক্ষটি। আবার শামীম ওসমান বলয় থেকে বের হয়ে গেলেও মাহমুদা মালা ব্যতিত অন্যরা এখনও পর্যন্ত শামীম ওসমান বিরোধী জোরালো কোনো বক্তব্য দেননি।
সূত্র বলছে, কৃষক লীগ ও যুব মহিলা লীগের কমিটিকে কেন্দ্র আনোয়ার হোসেন, খোকন সাহা ও মাহমুদা মালার সাথে শামীম ওসমানের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আনিসুর রহমান দিপুর সাথে বার কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দূরত্ব বেড়েছে। তবে তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। আর এরা যে শামীম ওসমান বিরোধী শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে সে বলার অপেক্ষা আর রাখে না। আগামীতে তথা নির্বাচনকালীন সময়ে এই বিরোধের ব্যাপারটি আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ (সদর-বন্দর)-৫ আসনে বর্তমান সাংসদ। এই আসনে তিনি জাতীয় পার্টি পক্ষ থেকে নির্বাচন করে নির্বাচিত। আওয়ামী লীগই এ আসনটি জাপাকে ছাড় দেয়। যে কারণে এই আসনে বিগত তিনটি নির্বাচনে নৌকার কোনো প্রার্থী ছিলো না। তবে এবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ এই আসনটি ছাড় দিতে নারাজ। এখান থেকে এবার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত অ্যাড. খোকন সাহা। এছাড়াও আইভী বলয় থেকে এই আসনে প্রার্থী হতে মুখিয়ে আছেন আরও চারজন।
ধারণা করা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন নিয়ে ওসমান পরিবারের সাথে খোকন সাহাসহ অন্যদের দূরত্ব আরও বেশি করে বেড়ে যাবে। হয়তো প্রকাশ্যেই এ নিয়ে নানা ধরণের সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। কেননা, এ আসনে জাপাকে ছাড় না দেয়ার পক্ষে আওয়ামী লীগের বিশাল একটা অংশ সক্রিয় হলেও এ নিয়ে শামীম ওসমান এখনও কোনো মত ব্যক্ত করেনিনি। তাই অনেকে ধরেই নিয়েছেন শামীম ওসমান মুখে মুখে না বললেও এই আসনটি শামীম ওসমানেরই থাকুক এবং এখানে নৌকার কোনো প্রার্থী না থাকুক এটাই চাচ্ছেন।
অন্যদিকে শামীম ওসমানের নিজের আসন নারায়ণগঞ্জ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ)-৪ আসনেও তাঁর শক্ত প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে। এখান থেকে এবার নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন কাউসার আহম্মেদ পলাশ। শামীম ওসমানের বিকল্প হিসেবে তাঁকেই ভাবতে শুরু করেছেন অনেকে। যদিও পলাশের সাথে শামীম ওসমানের সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিলো। কিন্তু বর্তমানের এই মনোনয়নকে কেন্দ্র সম্পর্কটা আগের স্থানে নেই বলেই মনে করছেন অনেকে।
সম্প্রতি পলাশও আটঘাট বেঁধে আইভী শিবিরে গিয়ে মিশেছেন। শুধু পলাশই নন, শামীম বিরোধী আরও যাঁরাই আছেন তাঁরা সকলেই আইভী বলয়ে গিয়েছেন এবং যাঁরা এখনও প্রকাশ্যে নয়, তাঁরা গোপনে গোপনে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। সময় মতো অনেকেই খোলশ ছেড়ে বের হয়ে আসবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে শামীম ওসমান বিরোধী শক্তি দিন দিন যতই শক্তিশালী হয়ে ওঠছে সিনিয়র নেতাদের সমন্বয় শামীম ওসমান শিবির ততই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে নেতাশূন্যতায়। কেননা, জেলা বা মহানগরের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল ছাড়া শামীম ওসমান বলয়ে উল্লেখ করার মতো তেমন আর কেউই নেই। যাঁরা রয়েছে তাঁরা প্রায় অনেকেই থানা ভিত্তিক রাজনীতিতে অভ্যস্ত।
এছাড়াও এখনও যাঁরা শামীম ওসমানের সাথে রয়ে গেছেন বা আছেন তাঁদের কেউ কেউ দু’দিক ব্যালেন্স করেই চলছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বলা হচ্ছে এদের অনেকেই সময় হলেই শামীম ওসমান শিবির থেকে বের হয়ে আইভী শিবিরের সাথেই মিশে যাবেন। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিগত সময় নেতাকর্মীদের কথা না ভেবে রাতের আঁধারেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন শামীম ওসমান। এবারও তেমন কিছু হতে পারে অথবা যদি হয়? এমন চিন্তা থেকেই অনেকেই নিরাপদ অবস্থান হিসেবে আইভী বলয়কেই মনে করছেন।
তাছাড়াও বয়ঃজ্যেষ্ঠ কোনো নেতাও শামীম ওসমান বলয়ে না থাকায় অনেকেই মনে করছেন শামীম ওসমান যদি এবারও পূর্বেকার মতো দেশ ছেড়ে যান তাহলে তাঁদের নেতৃত্ব কে দিবে? বিগত সময় আইভী, এসএম আকরাম, আনোয়ার হোসেন, খোকন সাহা তৃণমূলকে সাহস, ভরসা দিয়ে পাশে থেকেছিলেন। এবার তাঁরা নেই। এমনকি শামীম ওসমানের পক্ষ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধেও শামীম পন্থী অনেকেই প্রকাশ্যে বিষোদগার কেরেছন। যাঁর কারণে শামীম ওসমান বিহনীন আগামীতে এরা যে তাঁদের কাছে আশ্রয় পাবে না সে হিসেবও অনেকে কষতে শুরু করেছে। মূলত এমন হিসেব থেকে অনেকেই এখন গোপনে গোপনে শামীম ওসমান বিরোধী শিবিরের সাথে সম্পর্কটা ঝালিয়ে নিচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
৬ জুলাই, ২০১৮/এসপি/এনটি
আপনার মতামত লিখুন :