NarayanganjToday

শিরোনাম

যেসব কারণে আইভী ও শামীম ওসমানের সহাবস্থান সম্ভব নয়


যেসব কারণে আইভী ও শামীম ওসমানের সহাবস্থান সম্ভব নয়

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমান। তাঁদের মধ্যে বৈরিতা বহুদিনের। কারো মতে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এই বৈরিতা যা খোদ দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মিটিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তবে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, এই দুই প্রভাবশালী নেতার সহাবস্থান পাল্টে দিতে পারে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতি। তাঁদের দু’জন এক টেবিলে বসে স্থানীয় আওয়ামী লীগের করণীয় ঠিক করতে পারলে যে কোনো সময়ের চেয়ে এই জেলায় এই দলটির সাংগঠনিক ভিত হবে অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু তাঁদের মিলন কি হবে?

এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই সব থেকে বেশি উচ্চারিত হয় ‘না’। বহুবিধ কারণে এই দুই প্রভাবশালী নেতার সহাবস্থান সম্ভব নয় বলেই মনে করেন বোদ্ধা মহল। কালেভদ্রে তাঁদের একসঙ্গে দেখা গেলেও ব্যাপারটা ছিলো অনেকটা ‘মুখে হাসি অন্তরে বিষ’ প্রবাদের মতো অবস্থান।

এদিকে আইভী ও শামীম ওসমানের সহাবন্থান না হওয়ার নেপথ্যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ওঠে এসেছে। এর একটি এবং অন্যতম কারণ হচ্ছে পৈত্রিক সূত্রে দ্বন্দ্ব। দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একে অপরকে ছাড় না দেয়ার মানসিকতায় বৈরি সম্পর্কে আরও বেশি তিক্ততা বাড়িয়ে দেয়া। তৃতীয়টি হলো, পারভেজ গুমের ঘটনায় আইভীর ভাই ও ভাগিনাকে আসামী করে জেল খাটানোর ঘটনা এবং সর্বশেষ কারণটি হলো ত্বকী, আশিক, ভুলসহ চাঞ্চল্যকর কয়েক হত্যাকা-ের ঘটনায় ওসমান পরিবারকে দায়ি করে এর বিচার দাবিতে চলমান আন্দোলনে আইভী ছিলেন একজন সক্রিয় প্রতিবাদী।

বোদ্ধামহল বলছে, প্রথম তিনটি কারণে ভেতরগত ক্ষোভ থাকলেও শেষ কারণটি নীতিগত ভাবেই শামীম ওসমানের সাথে আইভীর সহাবস্থানের অন্তরায়। তাঁদের মতে, এসব প্রতিবাদে আইভী একজন দৃঢ়চেতা প্রতিবাদীর যে ভূমিকা দেখিয়েছিলেন এর কারণেই নারায়ণগঞ্জের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশে^ও তাঁকে পরিচিতি এনে দিয়েছেন। অনেকের কাছে তিনি একজন আপোষহীন প্রতিবাদী হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। ফলে এই অবস্থা পরির্বতন করে তিনি যদি সরে আসেন তাহলে ইমেজ সঙ্কটে পড়তে পারেন তিনি। আর এ কারণে এই ভুলটি মেয়র আইভী কখনোই করবেন না।

এছাড়াও দল যখন প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীকে মনোনয়ন না দিয়ে শামীম ওসমানকে মনোনয়ন দিয়েছিলো তখন আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতাই দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক শামীম ওসমানের পক্ষে গিয়েই দাঁড়িয়েছিলেন। সেসময় আইভীর পাশে পোড়-খাওয়া কয়েকজন দলীয় নেতা ও বাম ঘরানা এবং সংস্কৃতিক কর্মীরা ছিলেন আইভীর নির্বাচনের অগ্রভাগের প্রাণভ্রমরা। আর এই তাঁদের সাথে শামীম ওসমানের সম্পর্ক আগে থেকে এখন পর্যন্ত মন্দের মধ্যেই রয়েছে। ফলে দুর্দিনে পরম বন্ধু হয়ে যাঁরা পাশে ছিলেন সেই তাঁদের ছেড়ে আইভী কখনোই শামীম ওসমানের সাথে সহাবস্থানে যাবেন না বলেই মনে করছেন বোদ্ধামহল। 

আবার কারো কারো মতে, কিছু মধ্যসত্বভোগিদের কারণে আইভী ও শামীম ওসমানের সহাবস্থন সম্ভব হচ্ছে না। এরা উভয়ের কাছ থেকেই লাভবান হচ্ছে বলেই তাঁদের বিরোধটা জিইয়ে রাখছে। নানা ভাবে বিরোধটাকে আরও উস্কে দিচ্ছে।

আইভী এবং শামীম ওসমানের মধ্যে সহাবস্থান কেন সম্ভব নয়, এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান মাসুমের কাছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ টুডে’কে বলেন, “দানবের সাথে মানবের সহাবস্থান কখনোই হয় না। এরা একসাথে কখনোই চলতে পারে না। দানবের সাথে লড়াই সংগ্রাম করেই মানবকে টিকে থাকতে হয়।”

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বাদলের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি নারায়ণগঞ্জ টুডে’কে বলেন, “আইভী ও শামীম ওসমান দু’জনই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের অবস্থান দু’দিকে, একজন এমপি আরেকজন মেয়র। দু’জনের লক্ষ্যই কিন্তু উন্নয়ণ। কিন্তু তাঁদের দুজনের সহাবস্থান না থাকার কারণে সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি আমরা নগরবাসী।”

তিনি বলেন, “কিছু মধ্যসত্বভোগি আছে যাঁরা আইভীর দ্বারাও লাভবান আবার শামীম ওসমানের দ্বারাও। মূলত এরাই চাচ্ছে না তাঁদের দু’জনের সহাবস্থান। কেননা, তাঁরা দুজন যদি মিলে যায় তাহলে এই পক্ষটি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এরা আসলে উভয়েরই চেলাচামুন্ডা। এদের উভয় পক্ষই বিশ্বাস করে। আর এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাঁরা দুজনের মধ্যে বিরোধটাকে জিইয়ে রাখছে। তবে, নগরবাসীর স্বার্থে তাঁদের দুজনকে এক হওয়া অত্যন্ত দরকার। আর এটা মনে হয় না খুব বেশি কষ্টকর।”

সন্ত্রান নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, “রাজনীতির ভিত্তিই হচ্ছে জনগণ কিন্তু শামীম ওসমান কখনোই জনগণের উপর ভিত্তি করে রাজনীতি করেনি, এখনও করে না। তাঁর রাজনীতির ভিতিই হচ্ছে পেশি শক্তি আর অর্থের মাধ্যমে যাকে বলা হয় রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন। আর আইভীর রাজনীতি শামীম ওসমানের অনেক পরে হলেও তাঁর অবস্থান শামীম ওসমানের বিপরীতে। অর্থাৎ আইভী, অর্থ, পেশি শক্তির রাজনীতি করেনি, এখনও করছে না। সুতরাং তাঁদের দুজনের মূল বিরোধটা এখানেই।”

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান নারায়ণগঞ্জ টুডে’কে বলেন, “আইভী ও শামীম ওসমানের সহবাস্থান না হওয়ার একটাই কারণ ‘অদর্শ’। আইভী তাঁর পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতি করেন আর শামীম ওসমানদের রাজনীতি সেটা নয়। তাঁরা পার্টিকে ব্যবহার করে জনগণের উপর তা প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার রাজনীতি করে। যা মেয়র আইভী কখনোই করেনি। আর এটাই হচ্ছে তাঁদের আদর্শগত বিরোধ।”

একই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা হাফিজুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, “আমরা আইভীর পাশে ছিলাম না। ছিলাম একটি অপশক্তির বিরুদ্ধে লাড়াইয়ে, নীতিগত ভাবে ঐক্যের মাধ্যমে। আমরা কোনো ব্যক্তির পক্ষে নয়; ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করি। আমাদের এই লড়াইয়ে যাঁরা আসে তাঁদের সাথেই ঐক্য গড়ি।”

তবে, তিনি একইসাথে বলেন, “আইভী শামীম এক সাথে থাকলেও আমাদের কিছু আসে যায় না, না থাকলেও না। তাঁরা আমাদের পার্টির কেউ না তাই এ নিয়ে মন্তব্য করারও আমাদের সুযোগ নেই।”

২৮ জুলাই, ২০১৮/এসপি/এনটি

উপরে