NarayanganjToday

শিরোনাম

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে সেলিম ওসমান


কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন। যদিও এই প্রভাবশালী ব্যক্তি এখনও কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা দেননি। তবে প্রার্থী হচ্ছেন, এটুকু সবার কাছেই স্পষ্ট।

বিগত নির্বাচনে তথা উপনির্বাচনে তিনি তাঁরই বড় ভাই নাসিম ওসমানের আসনে নির্বাচন করেন এবং কোনো রকম বেগ পেতে হয়নি নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে। অনেকটা হেসে খেলেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির লোকজনও কাজ করেছে। পার্থক্য শুধু কেউ ছিলেন প্রকাশ্যে আর কেউ ছিলেন পর্দার আড়ালে।

এদিকে এবারের নির্বাচনে সেলিম ওসমান প্রার্থী হলেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়াটা তাঁর জন্য সহজ হবে না। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই পড়তে হবে তাঁকে। একদিকে বিএনপি অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাথে লড়াই করতে হবে আগামী নির্বাচনে।

যদিও সেলিম ওসমান আওয়ামী লীগ পরিবারেরই লোক। কিন্তু বিগত দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই আওয়ামী লীগ থেকেই তাঁর বিরোধী সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। এরমধ্যে বিগত নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী পরিচালনার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যেই অ্যাড. খোকন সাহা, সেই তিনি এখন তাঁর ঘোর বিরোধী।

এছাড়াও সেলিম ওসমান বিরোধীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাড. আনিসুর রহমান দিপু। তিনি এবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাঁর পাশাপাশি খোকন সাহা একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

শুধু তাই নয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও রয়েছে সেলিম ওসমান বিরোধীদের তালিকাতে। যদিও তাঁরা সেভাবে প্রকাশ্যে তেমন কোনো বিরোধীতা করে বক্তব্য রাখেননি।

অন্যদিকে সেলিম ওসমানের এই আসনে তাঁর শক্ত বিরোধীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান। ইতোমধ্যে তিনি সেলিম ওসমানের বিরোধী বেশ কয়েকটি জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়াও লাঙ্গলের বিরোধী করে নৌকার পক্ষে পৃথক তিনটি শো-ডাউনও করেছিলেন। এরমধ্যে দুটি বন্দরে একটি শহরে। যা ছিলো চোখে পড়ার মতো।

এছাড়াও সেলিম ওসমানের বিরোধীতা করে একই আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন এবং গণসংযোগ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আরজু রহমান ভুইয়া ও আব্দুল কাদির। মূলত তাঁরা মেয়র আইভী বলয়ের হয়ে মাঠে নেমেছেন। আর আইভী বলয়টাই সেলিম ওসমানের ঘোর বিরোধী। বলা চলে এরা অত্যন্ত শক্তিশালি একটি গ্রুপ সেলিম ওসমানের বিপরীতে।

এতো গেলো নিজ পরিবার বা দলের বিরোধীতা। এর পাশাপাশি জাতীয় পার্টির একটি গ্রুপও আছে যারা সেলিম ওসমানের পক্ষ থেকে সরে গিয়ে প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী সন্তানদের সাথেই রয়ে গেছেন। তাঁরা চাচ্ছেন এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে সেলিম ওসমান নয়, নাসিম ওসমানের সহধর্মীনি পারভীন ওসমান অথবা আজমেরী ওসমান প্রার্থী হোক।

এছাড়া বিএনপির বিরোধীতা তো রয়েছেই। উপনির্বাচনে বিএনপির লোকজন সেলিম ওসমানের পক্ষে থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীর বাইরে বিএনপির নেতাকর্মীরা যাবেন না। তবে কেউ কেউ বিশ^াসঘাতকতা করে সেলিম ওসমানের জন্য কাজ করবে সে প্রকাশ্যে হোক বা আড়ালে তা বিএনপির অনেক নেতারাই জানেন, তাঁদের কাছে এ ব্যাপারটি স্পষ্ট। 

এদিকে এর বাইরেও মূল আলোচনা ছিলো এবারের নির্বাচনে সেলিম ওসমান কোন দল থেকে প্রার্থী হবেন, আওয়ামী লীগ নাকি জাতীয় পার্টি। সে ক্ষেত্রে মহাজোট থাকলে সমস্যা ততটা না হলেও আওয়ামী লীগ ও জাপা পৃথক ভাবে নির্বাচন করলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

কারো কারো মতে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে নৌকার প্রার্থী চাই বলে যেভাবে রব তুলেছে সে হিসেবে এই আসনে নৌকার প্রার্থী না হলে মহাজোট থেকে সেলিম ওসমান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও তাঁর সে পথ পারি দেয়া সহজ হবে না। আওয়ামী লীগেরই বিরাট একটি অংশ তাঁর বিরোধীতা করে মাঠে থাকবে সে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে গেল কয়েক মাসের পর্যবেক্ষণে।

আবার সেলিম ওসমানকে নৌকার প্রার্থী করা হলেও বিরোধীতা থাকবেই। সব মিলিয়ে সেলিম ওসমানের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষামান। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে শেষতক নির্বাচনী বৈতরণী তিনি পার হতে পারবেন কিনা সেটিই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।

এদিকে সেলিম ওসমান বেশ কয়েকবারই বলেছেন তিনি প্রার্থী হবেন কিনা আর হলে কোন দল থেকে প্রার্থী হবেন সে ঘোষণা তিনি সেপ্টেম্বরে দিবেন। তাঁর এই ঘোষণার জন্যই এখন অনেকের অপেক্ষা। আর এই চূড়ান্ত ঘোষণার মধ্য থেকেই বোঝা যাবে আগামীতে সেলিম ওসমানের জন্য কি অপেক্ষা করছে? আর ততদিন পর্যন্ত সকলকেই অপেক্ষা করতে হবে সে সমিকরণের জন্য।  

১১ আগস্ট, ২০১৮/এসপি/এনটি

উপরে