বিষয়:
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০১৯, ০৭:২৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৬, ২০১৯, ০৫:২৪ পিএম
নারায়ণগঞ্জ টুডে
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৬, ২০১৯, ০৫:২৪ পিএম
নারায়ণগঞ্জ টুডে
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আর আল্টিমেটামের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরণের উত্তেজনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শহরের উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর মধ্যে এই উত্তেজনার পারদ নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে।
এই দুই মেরুর মধ্যে থেমে থেমে বহু আগের থেকেই বাগযুদ্ধ, প্রকাশ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা এবং উত্তেজনা চলে আসলেও গেল বেশ কিছুদিন ধরেই উভয় মেরুর মধ্যে উত্তেজনা ছিলো প্রশমিত। তবে, হঠাৎ করেই ৮ জুন ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব ও প্রবীণ সাংবাদিক হালিম আজাদের একটি বক্তব্য দুই মেরুর ছাইচাপা অনলে হাওয়া দিয়ে উস্কে দেয়।
হালিম আজাদ সেদিন তার বক্তব্যে ত্বকী হত্যায় সাংসদ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান এবং ভাতিজা আজমেরি ওসমানের গ্রেফতার দাবি করেন। তার এই বক্তব্যেও পরই তীব্রভাবে ক্ষিপ্র হয়ে উঠে ওসমান পরিবার অনুসারি ব্যক্তিরা। এরমধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হালিম আজাদের গ্রেফতার দাবি করে, জিল্লুর রহমান লিটন ওই প্রবীণ সাংবাদিককে অসুস্থ দাবি করে তার ডোপ টেস্ট করানোর দাবি তুলেন। সাংসদ পুত্র অয়ন ওসমান এ ঘটনায় ফেসবুকে পোস্টে তার অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল হালিম আজাদকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান করেছিলেন।
এসবের প্রেক্ষিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, সদস্য সচিব সাংবাদিক হালিম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান গণমাধ্য পাল্টা মন্তব্য করেন। তাদের মধ্যে রফিউর রাব্বি ওসমান পরিবার অনুসারিদের বক্তব্যকে নেশাখোর, খুনী, সন্ত্রাসীদের বক্তব্য উল্লেখ করে তা নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই বলে জানিয়েছিলেন। আর অন্যরা বলেছিলেন, হালিম আজাদকে নিয়ে যারা (ওসমান পরিবার অনুসারি) মন্তব্য করছেন তারা ‘অসভ্য’।
এছাড়াও ওসমান পরিবার অনুসারিদের লক্ষ্য করে হালিম আজাদ বলেছিলেন, কারো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে সে কে, কি করেন, তার অতীত কি, এসব জেনে মন্তব্য করতে। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছিলেন, জয় বাংলা নিয়ে তিনি কোনো কটুক্তি করেন নাই।
তবে, এই উত্তেজনার পারদ আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেন মেয়র আইভী আলীগঞ্জ মাঠে ১৫ জুন বক্তব্য রাখতে গিয়ে। তিনি সেখানে তার বক্তব্যে সাংসদ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে ৪ একর জমি দখলের অভিযোগ তুলেন।
আইভী বলেছিলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ওসমানী স্টেডিয়াম দখল করে আপনার বাবার নাম দিয়েছেন কেন, কি কারনে? সাবেক পৌরসভার ৯ একর জমি দিয়েছেলো এই ওসমানী স্টেডিয়ামের জন্য। সেখান থেকে আপনি ৪ একর জমি দখল করে নিয়েছেন। সেই দখল করা জমিতে আপনি আপনার বাবার নাম দিয়েছেন। কেন দখল করেছেন? দখলের করার স্বভাবটা আপনি বন্ধ করুন।’
মেয়রের এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরই বেশ ভালো ভাবেই চটেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম। শামীম ওসমানকে ‘দখলবাজ’ তিনি পাল্টা মেয়র আইভীসহ তার পিতা, পরিবার এবং ঘনিষ্ঠজনদেরকে দখলবাজ বলে মন্তব্য করেন।
এছাড়াও শাহ নিজাম আইভীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি আপনার বিশ্বস্ত লোক দিয়ে সিটি করপোরেশন এর সকল টেন্ডার নিজের দখলে রেখেছেন। আপনার পিতা জিওস পুকুর, বর্তমান আপনার বাড়িসহ বহু হিন্দু সম্পত্তি দখল করেছেন। কাউকে খুশি করতে একজন সন্মানিত সাংসদকে নিয়ে কটুক্তি করা শোভনীয় না।’
সর্বশেষ ১৬ জুন মেয়র আইভীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল। ২০০১ সালে চাষাড়া শহীদ মিনারের পাশে আওয়ামী লীগের অফিসে বোমা হামলার ঘটনায় নিহত ২০ জনের স্মরণে নির্মিতব্য স্মৃতিস্তম্ভে ময়লা আবর্জনার স্তুপ হয়ে থাকায় তিনি ওই আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
সূত্র বলছে, এর আগেও এমন বাগযুদ্ধ, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আর আল্টিমেটাম দেওয়ার বহু ঘটনাই ঘটেছে। সর্বশেষ এসব উত্তেজনা পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারিতে। এদিন উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্রের প্রদর্শনি ও গুলির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় শামীম ওসমান পন্থীরা মেয়রের উপর হামলা চালালে তিনি আহতও হয়েছিলেন।
নগরবাসীর মতে, এবারও তাদের মধ্যে পূর্বের মতে উত্তেজনা, ক্ষোভ আর খেদোক্তির মধ্য দিয়ে জল ঘোলা হতে চলেছে। বেশ কয়েকটি ইস্যু এখানে সামনে চলে আসছে। এরমধ্যে, হকার উচ্ছেদ, আলীগঞ্জ মাঠ উচ্ছেদ এবং রক্ষা ও আলোচিত ত্বকী হত্যাকা-। যদিও এবার হকার উচ্ছেদ করছে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। তবে, এই হকার উচ্ছেদে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে দক্ষিণ মেরু তথা আইভীসহ তার ঘনিষ্ঠ সকলের। তবে, এই হকারদের নিয়ে স্বার্থ জড়িত উত্তর মেরুর। ফলে এ নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ হলেও পুলিশের বিপক্ষে সেভাবে যেতে পারছে না। আর সেই ক্ষোভ গিয়ে জমা হচ্ছে দক্ষিণ মেরুর প্রতি। তাদের ধারণায় ওই পন্থীরাই এই হকার উচ্ছেদের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে।
এছাড়াও আলীগঞ্জ মাঠ উচ্ছেদ করে তা দখলে নিয়ে এখানে অফিসার্স কোয়ার্টার নির্মাণের সাথে স্থানীয় এমপি হিসেবে শামীম ওসমানও জড়িত রয়েছেন। তার স্বার্থ এখানে রয়েছে। এবং তার অনুসারিদেরও স্বার্থ জড়িত এখানে। ফলে প্রজেক্টের কাজ শুরু করে তা শেষ করতে না পারলে তাদের স্বার্থ বিঘিœত হবে। ফলে তারা নেপথ্যে থেকে নানা ভাবেই চেষ্টা তদ্বির করে যাচ্ছেন মাঠটি দখলে নিতে। কিন্তু এর অন্তরায় প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে পলাশ। এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছেন মেয়র আইভী। সব মিলিয়ে এই ইস্যুটিও ওসমান পরিবারের স্বার্থ জড়িত।
তাছাড়া ত্বকী হত্যা নিয়ে সম্প্রতি হালিম আজাদ তার বক্তব্যে সরাসরিই শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানের গ্রেফতার দাবি করেছেন। যা এই পরিবারের জন্য অপমানজনক বলেই মনা করা হচ্ছে। কেননা, তাদের বিরুদ্ধে এমন করে কথা বলার লোক এই নারায়ণগঞ্জে কখনোই ছিলো না। ফলে ধারণা করা যাচ্ছে এবার উত্তর-দক্ষিণ মেরুর উত্তেজনায় বেশ কয়েকটি ইস্যু যুক্ত হওয়াতে এ নিয়ে জল অনেকদূর গড়াতে পারে।
১৬ জুন, ২০১৯/এসপি/এনটি
আপনার মতামত লিখুন :