জুরি বোর্ডের সব সদস্য শ্বেতাঙ্গ ছিল এমন একটি বিচার প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন জ্যাক জনসনকে নির্দোষ ঘোষণা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হলিউড তারকা সিলভাস্টার স্ট্যালনের অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প।
কৃষ্ণাঙ্গ হওয়া গ্যালভেস্টনে জন্মগ্রহণকারী জনসন শিকার হয়েছিলেন চরম বর্ণবৈষম্যের। ১৯১০ সালে 'ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি' হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বক্সিং ম্যাচটিতে শ্বেতাঙ্গ বক্সার জেমস জেফরিসকে হারানোর পর তার উপরে রীতিমত হামলে পড়ে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাদা-কালোদের মধ্যে দাঙ্গাও ছড়িয়ে পড়েছিল সে সময়।
এর পরে ১৯১৩ সালে 'মান অ্যাক্টের'র অধীনে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীকে এক রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করে আরেক রাজ্যে নিয়ে যাওয়ায় মুষ্টিযোদ্ধা জ্যাক জনসনকে দোষী বলে রায় দেয় আদালত।
মান অ্যাক্টের আওতায়, শ্বেতাঙ্গ নারীদের নিয়ে ‘অনৈতিক কাজের’ জন্য রাজ্যের সীমানা অতিক্রমের ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
বিচারকরা শ্বেতাঙ্গ যে নারীর সাথে জনসনের সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তীতে লুসিলি ক্যামেরন নামের এ মার্কিন নাগরিক জনসনকেই বিয়ে করেছিলেন।
লুসিলি প্রসিকিউটরকে সহযোগিতা না করলেও এক প্রত্যক্ষদর্শীর স্বাক্ষ্যে ফেঁসে যান জনসন। দোষী সাব্যস্ত হবার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে কানাডা এবং সেখান থেকে ফ্রান্সে চলে যান এ বক্সার। তবে সাত বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসলে ১০ মাসের জেল খাটেন তিনি।
জনসন ১৯৪৬ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। কিন্তু, তার বংশধর লিন্ডা হেউড জনসনকে ক্ষমা করার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছেন।
জনসনের জীবনীর ওপর ভিত্তি করে ১৯৭০ সালে ‘দ্য গ্রেট হোয়াইট হোপ’ নামের একটি কাহিনীচিত্র এবং ২০০৪ সালে ‘আনফরগিভেবল ব্ল্যাকনেস: দ্য রাইজ এন্ড ফল অফ জ্যাক জনসন’ নামের একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়।
তখন ২০০৪ সালে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার দাবি উঠলেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে তা গুরুত্ব পায়নি। জনসনকে ক্ষমা না করেই হোয়াইট হাউজ ছাড়ায় সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন ওবামা।
এ বছর এপ্রিলে হলিউড তারকা সিলভাস্টার স্ট্যালন জ্যাক জনসনের কাহিনী ট্রাম্পের গোচরে আনেন। জনসনের এক চাচাতো ভাইয়ের নাতি হন স্ট্যালন। সে সময় ট্রাম্প এক টুইটার বার্তা জানান, 'জনসন বক্সিংয়ের ইতিহাসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। তার বিচার ও দুর্দশা ছিল বিরাট, জীবন ছিল জটিল এবং বিতর্কিত। অন্যরা এটা দেখেছেন, অনেকেই এটা করার কথাও ভেবেছেন, কিন্তু হ্যাঁ আমি সম্পূর্ণ ক্ষমা ঘোষণার কথা বিবেচনা করছি।'
এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার জনসনকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেন ট্রাম্প। ওভাল অফিসে এদিন আমন্ত্রিত হন স্ট্যালন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জনসনের বংশধর লিন্ডা হেউড জনসনও। তাদের হাতে জনসনকে ক্ষমা করে দেয়ার প্রত্যয়নপত্র তুলে দেন ট্রাম্প।
২৫ মে, ২০১৮/এসপি/এনটি
আপনার মতামত লিখুন :